রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ১৬ বছর পার হতে চলল। এখনও বিচার হয়নি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার।
Advertisement
দেশব্যাপী আলোচিত ওই ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিস্ফোরক আইনে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এরই মধ্যে মামলার ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এদিকে অবশিষ্ট সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হলেও তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ঝুলে আছে আলোচিত মামলাটি।
Advertisement
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। কিন্তু সাক্ষীদের ঠিকানায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না। তবে ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘নির্ধারিত প্রতি তারিখে সাক্ষীদের হাজির না করায় মামলাটির বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা চাই মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ হোক। রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে ন্যায়-অন্যায়ের।’
বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে যারা কারাগারে আছেন তারা হলেন- মাওলানা আকবর হোসেন, আব্দুল হান্নান, আরিফ হোসেন, শাহাদাত হোসেন, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আব্দুর রউফ, ইয়াহিয়া, আবু বকর ও আবু তাহের।
Advertisement
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি ১২ এপ্রিল রাতে কার্যকর হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
অন্যদিকে মাওলানা তাজউদ্দিন, শকিকুর রহমান, আবদুল হাই ও জাহাঙ্গীর আলম বদর এখনও পলাতক।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (বাংলা ১৪০৮ সনের ১ বৈশাখ) ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। ওই ঘটনার পর রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইন দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। বর্তমানে হাইকোর্টে মুফতি হান্নানসহ আট আসামির ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল শুনানি চলছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক) ও আরিফ হাসান সুমন। তাদের ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। আসামিদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। তাদের ৩০২/৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
জেএ/এসআর/এমএআর/জেআইএম