স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে না হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই মঙ্গলবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য যাবতীয় সামগ্রী পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার অবসান ঘটছে রোববার মধ্যরাত থেকে। সেনাবাহিনী মাঠে না থাকায় ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে জনমনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তুমুল সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। খালেদা জিয়ার ওপর কয়েক দফা হামলা, সকল প্রার্থী সমানভাবে প্রচারের সুযোগ না পাওয়া, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ওপর পুলিশি হয়রানি, অভিযোগ আমলে না নেয়াসহ নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে।সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ২৭০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ২১৮০টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ইসিতে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকছে। ইতোমধ্যে তিন সিটিতেই ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এবার মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ মোট এক হাজার ১৮০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শেষ মুহূর্তে সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে নির্বাচনী ময়দানে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রস্তুতি সম্পন্ন, সিটি নির্বাচনে ৮০ হাজার ফোর্স মাঠে থাকবে: তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সব মিলিয়ে ৮০ হাজার ফোর্স নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা মোটামুটি হিসেব করে দেখেছি আনসার, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি মিলে প্রায় ৮০ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী নির্বাচনে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা যখনই মনে করবেন, তখনই সেনাবাহিনী চলে আসবে।প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, তিন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের সব লজিস্টিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। নির্বাচনী কাজ ছাড়া সকল প্রকারের যানবাহন চলাচলের ওপর ভোটের দিন দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ভোটারদের নিরাপত্তা আর ভোটদান নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির ও আনসার মিলে প্রায় ৮০ হাজার সদস্য এই নির্বাচনে মাঠে কাজ করছেন। এদের সঙ্গে রোববার থেকেই মাঠে নামছে পাঁচশ ম্যাজিস্ট্রেট। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য নিরাপত্তায় থাকবেন। এ বিবেচনায় ২ হাজার ৭শ’ ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬২ হাজার নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া তিন সিটির প্রতি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সেই সঙ্গে ভোটকেন্দ্র বিবেচনায় ৭০ প্লটুন বিজিবি, ৭ প্লাটুন কোস্টগার্ড ও র্যবের ১০০টি টিম কাজ করবে। আজ ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল- এ চার দিনের জন্য তারা দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের বিশেষ টিম থাকছে।বহিরাগতদের পেলেই গ্রেফতার : রোববার থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা চৌকি। এছাড়া নির্বাচনী কাজে ছাড়া সকল প্রকারের যানবাহন চলাচলের ওপর ভোটের দিন দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এ এলাকার বাসিন্দা ছাড়া আজ থেকে বহিরাগত ব্যক্তির অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের পরের দিন পর্যন্ত সিটি এলাকায় কোনো বহিরাগত অবস্থান করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা : ২১৮০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের ৮০ ভাগ এবং চট্টগ্রামে ৮৩ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটির ১৯৮২টি কেন্দ্রের মধ্যে উত্তরে ৫৮৭ ও দক্ষিণে ৯৯৮ কেন্দ্র ঝুঁকিতে রয়েছে। আর চট্টগ্রামে ৭১৯টির মধ্যে ৫৯৫ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ইসিতে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা : তিন সিটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১১৮০ জন। এর মধ্যে উত্তরে মেয়র পদে ১৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ২৮১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৮৯জন। দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন। সাধারণ কাউন্সিল পদে ৩৯০ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ জন। একইভাবে চট্টগ্রামে মেয়র পদে লড়াইয়ে রয়েছেন ১২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ জন।অর্ধলক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : তিন সিটিতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনটি পদে কমিশন প্রিসাইডিং, সহকারি প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার নিয়োগ করেছেন ৪৯ হাজার ৩৩৩ জন কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে উত্তরে প্রিসাইডিং অফিসার ১০৯৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৫৮৯২ জন ও পোলিং অফিসার ১১৭৮৪জন। দক্ষিণে প্রিসাইডিং অফিসার ৮৮৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৪৭৪৬ জন ও পোলিং অফিসার ৯৪৯২ জন। একইভাবে চট্টগ্রামে প্রিসাইডিং অফিসার ৭১৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৪৯০৬ জন এবং পোলিং অফিসার ৯৮১২ জন। এছাড়া উত্তর সিটিতে রিটার্নিং অফিসার ১ জন এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ১২ জন, দক্ষিণে রিটার্নিং অফিসার ১ জন ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার ১৯ জন এবং চট্টগ্রামে রিটার্নিং অফিসার ১ জন এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ১৪ জনসহ মোট ৪৮ জন।ওয়ার্ড, ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা : ঢাকা উত্তর সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৩৬, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২; ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন (পুরুষ ১২,২৪,৭০১, নারী ১১,২০,৬৭৩)। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৯; ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন (পুরুষ ১০,০৯,২৮৬, নারী ৮,৬১,৪৬৭)। চট্টগ্রাম সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৪১, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৪; ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন (পুরুষ ৯,৩৭,০৫৩, নারী ৮,৭৬,৩৯৬)। ভোটকেন্দ্র উত্তরে ১০৯৩ ও ভোটকক্ষ ৫৮৯২টি, দক্ষিণে ভোটকেন্দ্র ৮৮৯ ও ভোটকক্ষ ৪৭৪৬টি এবং চট্টগ্রামে ভোটকেন্দ্র ৭১৯ ও ভোটকক্ষ ৪৯০৬টি।বহিরাগত ও যান চলাচল বন্ধ : এদিকে গত শনিবার রাত ১২টার পর থেকে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। আজ রোববার থেকে কোনো বহিরাগত অবস্থান করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। শনিবার রাত ১২টার পর থেকে মোটরসাইকেল এবং ২৭ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। প্রার্থী, প্রশাসন ও অনুমোদিত ব্যক্তি এবং জাতীয় হাইওয়েসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। এইচএম/বিএ/আরআইপি
Advertisement