ঢাকাই ছবির নন্দিত অভিনেত্রী রোজিনা। অসংখ্য ছবিতে তার নিপুন অভিনয় মুগ্ধ করে করে রেখেছে দর্শকদের মন। আজকাল আর নিয়মিত নন অভিনয়ে। বেশিরভাগ সময়টাই পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে কাটান।
Advertisement
বর্তমানেও তিনি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকেই লক্ষ্য করেছেন শাকিব-অপুর বিয়ে নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার রেশ। কিছুটা ক্ষোভ, কিছুটা শুভকামনা তিনিও জানালেন শাকিব-অপু দম্পতির জন্য।
জাগো নিউজের সঙ্গে ফোনালাপে রোজিনা বলেন, ‘আজকাল বলা হচ্ছে শাকিব খান দেশীয় চলচ্চিত্রের সুপারস্টার। তো একজন সুপারস্টারের এ ধরনের জীবন কাহিনী কেউ শুনতে চায় না। দিনশেষে সবাই মানুষ। সমাজ একজন সুপারস্টারকেও মানুষ হিসেবে মূল্যায়ণ করতে গিয়ে আর দশজনের চেয়ে একটু আলাদা দেখতে চায়, ক্যারিশমাটিক দেখতে চায়। কিন্তু শাকিব হতাশ করেছে। তার জন্য একটি মেয়ে নয়টা বছর ধরে তার বিবাহিত জীবন স্যাক্রিফাইস করেছে।
সে গোপনে সন্তানের মা পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও কেন অপুকে নিজের তাগিদে প্রকাশ করতে হলো এই খবর? শাকিবেরই উচিত ছিলো অন্তত ছেলে জন্মানোর পর তার সংসার জীবনকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। বুবলীকে নিয়ে ত্রিমুখী যে গল্প শোনা গেছে শাকিব নিজেই পারত তার জবাব দিতে। কিন্তু সেই সবকিছু রহস্য করে রেখেছিল। তারই গোলকধাঁধায় পড়ে অপু বাধ্য হয়েছে হয়তো প্রকাশ হতে। এর দায় শাকিব না নিলেও অপুকে দেয়া যায় না।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘শাকিব একটা অনুষ্ঠানে বলছিলো সে নাকি ছেলের জন্মদিনে বিয়ের খবর প্রকাশ করতো। কিন্তু এটা কতোটা বিশ্বাসযোগ্য সেটা দেশের মানুষ ঠিকই আঁচ করেছেন।’
শাকিব-অপুর দাম্পত্য জীবনের শুভকামনায় রোজিনা বলেন, ‘যতো কিছুই হোক আমরা জানি শাকিব-অপুর মধ্যে দারুণ একটি সম্পর্ক রয়েছে। শাকিবকে ভালোবেসে অপু ধর্ম, জাত বিসর্জন দিয়েছে। এটা সিনেমার মতো শোনালেও প্রেমের জন্য বিরাট আত্মত্যাগ। এর মূল্যায়ণ শাকিব করতে না পারলে তাকেই কষ্টে ভুগতে হবে। শুধু তাই নয়, শাকিবের ক্যারিয়ারের স্বার্থে অপু নিজের ক্যারিয়ারও জলাঞ্জলি দিয়েছে। শাকিবের উচিত অপুকে নিয়ে সুখী হওয়া।
আল্লাহ তাদের দেবশিশুর মতো একটি পুত্র রয়েছে। আব্রাহামকে আমার অনেক আদর ও দোয়া রইলো। আমি দোয়া করি ও তার বাবা-মায়ের খ্যাতিকেও ছাড়িয়ে যাক। ওর মুখের দিকে এবং ইন্ডাস্ট্রির ইমেজের দিকে থাকিয়ে সুখী হোক আমাদের চলচ্চিত্রের বহুল জনপ্রিয় জুটির দাম্পত্য জীবন। কেননা, তাদের বিয়ে নিয়ে যেসব হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি দর্শকের বিশ্বাস ও সম্মানে আঘাত এসেছে। আমরা চাই না কেউ আঙ্গুল তুলে বলুক, ফিল্মের লোক খারাপ। তাদের সংসার জীবন ভালো হয় না। শাকিব-অপু নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করুক।’
রোজিনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা সময় ছিলো ছোট পর্দার মানুষেরা চলচ্চিত্রকে অন্য চোখে দেখতো। অথচ, যতো স্ক্যান্ডাল, বাজে ঘটনা বেশি ঘটেছে ছোট পর্দার মানুষের মধ্যেই। চলচ্চিত্রেও কিছু ঘটনার জন্ম হয়েছে কিন্তু সেগুলো খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। তবে শাকিব-অপুর ঘটনাটি নাড়া দিয়ে গেছে সবাইকে। সবাইকে সচেতন হয়ে মিলেমিশে ইন্ডাস্ট্রির সুনাম বাঁচিয়ে চলতে হবে। এখন ভালো বংশ ও শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা কাজ করতে আসছে। তাদের জন্য পরিবেশটা সুন্দর রাখতে হবে।’
Advertisement
বিয়ে করলে কী তারকাদের চাহিদা কমে যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে রোজিনা বলেন, ‘এটা হাস্যকর কথা। আমাদের নায়করাজ রাজ্জাক সাহেব তো বাচ্চার বাবা হয়েই নায়ক হয়েছেন। সুপারহিট সব ছবি দিয়েছেন। নায়ক আলমগীর নিজের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ছবিতে নায়ক হয়েছেন। তারপরও তিনি অসংখ্য সুপারহিট ছবি দিয়েছেন। ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ আরও অনেকেই বিবাহিত হয়েও দেশ কাঁপিয়েছেন জনপ্রিয়তা দিয়ে। তাছাড়া যে বলিউডের খানদের আমাদের শাকিবরা অনুসরণ করে সেই খানরাও তো বিবাহিত। শাহরুখ খানের বিয়ের গল্প, বাচ্চাদের গল্প কে না জানে! তার অনেক কিছুই শাকিব খানের সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু শাকিব কী দেখে না শাহরুখ তার স্ত্রীকে কতোটা ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন!
আমির খান দুটো বিয়ে করেছেন, বাবা হয়েছেন। তারও জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আরও অনেক উদারহরণ আছে বিশ্বজুড়ে। আসলে অভিনয়টাই তারকা অভিনয়শিল্পীদের মূল অস্ত্র। কোনো নয়ক বা নায়িকা যদি নিজের অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, আত্মবিশ্বাসী হয় তবে এইসব বিষয় তাকে ভাবতেই হয় না।’
আগামী ৩০ এপ্রিল দেশে ফিরবেন জানিয়ে রোজিনা বলেন, ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি দেশে আসছি। এবারে আশা করছি চেয়ার দখল করা নেতাদের বদলে কর্মঠ, সৎ, দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ নেতৃত্ব উঠে আসবে। তারা সিনিয়রদের জন্য একটা শ্রদ্ধার জায়গা তৈরি করবেন। জুনিয়রদের জন্য স্নেহ আর ভালোবাসার পরিবেশ তৈরি করবেন। অনেক সিনিয়ররা অভিমান নিয়ে দূরে আছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। বড়দের ও অভিজ্ঞদের সংস্পর্শে থাকলে এ সময়ের শিল্পীরা অনেক কিছু জানবে ও বুঝবে। দর্শকরাও সিনিয়রদের দেখতে চান গল্পের ভেতরে। কিন্তু একটা বাজে ধারা প্রচলিত হয়ে নায়ক-নায়িকার বাইরে কোনো চরিত্রই মজবুত দেখা যায় না। ভালো ভিলেন তৈরি হচ্ছে না তাই, দিলদারের মতো কমেডিয়ানও আসছে না।’
তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ নিজেদের বিশাল প্রমাণ করতে সিনিয়রদে আড়ালে রাখার চেষ্টা করে। এতে করে তাদের ছোট কাজগুলোকে বড় দেখায়। কেননা, বড় কাজের মানুষগুলোকে তো সবাই দেখতে পারছে না। তুলনা করতে পারছে না। কিছু কিছু জায়গায় চামচামির বাড়াবাড়ি দেখা যায়। সবাই নিজের স্বার্থ গোছাতেই ব্যস্ত হয়ে থাকেন। তার চিত্র দেখা গেছে কিন্তু গেল চলচ্চিত্র দিবসে। সেদিন অনেক সিনিয়ররাই মন খারাপ করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন তো ক্ষোভে আর এফডিসিতে আসবেন না বলেই মন্তব্য করেছেন। আমাকে কোনো কার্ড বা দাওয়াতই দেয়া হয়নি। আরও অনেক সিনিয়র শিল্পীরা দাওয়াত পাননি। তবে কার জন্য এই চলচ্চিত্র উৎসব আমাদের বুঝে আসে না। আমি চাই নতুন’নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে আবারও জমে উঠবে শিল্পী সমিতি, জমে উঠবে এফডিসি, জমে উঠবে চলচ্চিত্রের নির্মাণ ও গল্প-চরিত্ররা। সেই সুদিনের স্বপ্ন দেখেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোজিনা।এলএ