জাতীয়

নিরাপত্তাভীতি কাটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা

দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় আয়োজন বাংলা নববর্ষ- ১৪২৪। শুক্রবার দিবসটি বরণ করতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানান আয়োজন।

Advertisement

চারুকলায় সকল ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে বাঙালিদের এক কাতারে দাঁড় করানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শেষের দিকে। দিন-রাত ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। ‘সব অশুভ শক্তি দূর হয়ে নতুন বছর হবে শুধু মঙ্গলের জন্য’- এমন বার্তাই দেবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা।

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার ভিন্ন আমেজ রয়েছে। অন্য যেকোন বারের চেয়ে এবার এটি আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শোভাযাত্রার আয়োজক প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে। যেটি সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যে চারুকলাসহ এর আশপাশের এলাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সেই সঙ্গে কড়া নজরদারিতে নিয়োজিত আছেন সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা ইস্যুতে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।

Advertisement

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কয়েকবার বসেছি। সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমরা চাই নিরাপত্তার কারণে উৎসব উদযাপনে কারও মধ্যে কোনো ভীতি না থাকুক।’

রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে ডিএমপি কমিশনার (আছাদুজ্জামান মিয়া) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে রাখা হবে পুলিশের বিশেষায়িত সোয়াট টিমকে। রাস্তার মাঝখান থেকে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের আগে প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হবে। নারীরা যাতে যৌন হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য মাঠে থাকবে পুলিশের বিশেষ টিম।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় দুই শতাধিক বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সঙ্গে দায়িত্বে থাকবেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী। চারুকলা, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, পলাশী, নীলক্ষেত এবং বিভিন্ন ভবনের আশপাশে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

Advertisement

এবার টিএসসিতে প্রথমবারের মতো তথ্য সহায়ক বক্স থাকবে। থাকবে মাইক। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মাইকে ঘোষণা করা হবে। গতবারের মতো এবারও ভুভুজেলা বা উচ্চশব্দ সৃষ্টি হয় এ ধরনের বাঁশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট। তবে দর্শনার্থীরা অন্যান্য গেট ব্যবহার করতে পারবেন। টিএসসি এলাকায় কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হবে না। ভ্রাম্যমাণ দোকান যাবে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের মাঠে। ওই দিন সকাল থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ এ সময় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও বাংলা নববর্ষ- ১৪২৪ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ ঘোষণা করায় এ বছর নববর্ষ আয়োজনে বৈশ্বিক গুরুত্ব রয়েছে। তাই এবারের আয়োজনের পরিসর অন্যবারের তুলনায় কিছুটা বড় হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করতে বলা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরাই প্রথম পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সেই থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালির বর্ষবরণে এনেছে নতুন মাত্রা। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এ শোভাযাত্রা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। গত বছরের নভেম্বরে চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ‘বিশ্ব অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে ইউনেস্কো।

এ বছর শোভাযাত্রার স্লোগান ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতীক হিসেবে থাকবে উজ্জ্বল সূর্যে হাস্যোজ্জ্বল মুখচ্ছবি। যার পেছনে থাকবে আরেকটি কদাকার মুখ। উদ্দেশ্য সব অন্ধকার যেন আসে আলোর দিকে। এর ব্যাখ্যায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আলোর মূল উৎস সূর্য। সেটাকে একটি প্রতীক হিসেবে নিয়ে আসা হচ্ছে, এটা হাতে ধরা থাকবে। এমন অন্তত পঞ্চাশটি সূর্য থাকবে। এ সূর্যের যে দিকটা আলোকিত সে দিকটায় একটা হাস্যোজ্জ্বল মুখ থাকবে এবং পেছনের দিকটা কালো থাকবে, সেখানে একটি কদাকার মুখ থাকবে।

তিনি বলেন, পেছনের কালো রঙটা দিয়ে জঙ্গিবাদকে বোঝানো হচ্ছে। কালো রঙটা নেয়া হয়েছে আইএসের পতাকার রঙ থেকে। জঙ্গিবাদ আমাদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে মুখ ঘোরাতে বলছি। এটাই আমাদের মূল আহ্বান।

এমএইচ/জেডএ/এমএআর/পিআর