তিস্তা চুক্তি নিয়ে সরকারকে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রতিক্রিয়া জানাতে মঙ্গলবার গুলশানে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
Advertisement
খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৭৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গঙ্গা চুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যান। এরপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপের কারণে তৎকালীন গঙ্গা চুক্তি করতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন আমাদের প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ন্যায্য পাওনা আদায় করতে চায়। তাই আমরা আশা করেছিলাম তার (প্রধানমন্ত্রী) এ সফরে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু তা হয়নি বরং শেখ হাসিনা ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ভারতকে খুশি করাই ছিল তার (প্রধানমন্ত্রী) প্রধান কাজ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, অধিকার আদায়ে দেশের মানুষকে এর প্রতিবাদ জানাতে হবে। বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। তাই জনগণের তিস্তা চুক্তি আন্দোলনে আমরা পাশে থাকব।
Advertisement
চুক্তি রিভিউ : ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে স্বার্থবিরোধী যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তা রিভিউ করা হবে।
অস্ত্র চুক্তি : ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, চীনের অস্ত্র ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত। আমরা যখন অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি বা সমঝোতা করেছি তখন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চুক্তি ও সমঝোতা করেছি। আমরা পুরনো জিনিস ক্রয় করিনি। চীন কেবল বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে।
অগ্রগতি শূন্য : শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ভারত সফর করেছেন। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর সই হয়েছে। এ সফরের আগেই দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও শঙ্কতি ছিলাম। চুক্তির আগে নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। এ গোপনীয়তার কারণে সবার মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, সীমান্তে হত্যাসহ এ সফরে কোনো অগ্রগতি মেলেনি।
দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি : জনগণের সম্মতি ও প্রতিনিধিত্বহীন এ ধরনের সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো অধিকার থাকে না। সেই কলঙ্কিত ও প্রহসনের নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ ভারত খুবই ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল। তাদের (ভারতের) প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণেই তারা টিকে আছে। দেশের মানুষ মনে করে এ সরকার ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি ও সমঝোতা সই করেছে তাতে দেশের কোনো স্বার্থ রক্ষা হয়নি। খর্ব হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। দেশের জনগণ এই ফলাফলে আতঙ্কিত।
Advertisement
ভারতের সঙ্গে বৈরিতা নেই : ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে যদি কাজ করতেন তাহলে সমর্থন দিতাম। ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতে বিগত শাসকদের এক তরফা ভূমিকায় আমরা শঙ্কিত। মানুষের সমর্থন ছাড়া কোনো চুক্তি গায়ের জোরে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তার ইতিহাস রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমদ আযম খান, শওকত মাহমুদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আমানউল্লাহ আমান, অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, ২০ দলীয় জোট নেতা মেজর জেনারেল (অব.) মো. ইব্রাহিম, শফিউল আলম প্রধান ও আন্দালিব রহমান পার্থ উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএম/আরএস/এএইচ/এমএস