বাংলাদেশ-ভারতের ৩৬টি চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা প্রদানের পর দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
Advertisement
তবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান জাগো নিউজের কাছে নিজের ব্যক্তিগত অভিমত জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদও তার ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজের ভারত সফর নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারেন। এ তৃপ্তির কথা তিনি প্রকাশও করতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি দেশের ১৬ কোটি মানুষ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মানুষ তৃপ্ত নয়। কারণ পানির অপর নাম জীবন। এখানে তো জীবনের প্রশ্ন ছিল। তিস্তা চুক্তি হলো না!’
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি না থাকলে মানুষ চাষাবাদ করতে পারে না। একেবারে মরুভূমির মতো হয়ে যায়। ফসল উৎপাদন বাধার সম্মুখীন হয়। এ সফরেও দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি।
Advertisement
‘১৬ কোটি মানুষ তাকিয়ে ছিল অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। সেটা হলো পানি সমস্যার সমাধান। এ নিয়ে ফলাফল আসেনি’ যোগ করেন বিএনপির এই নেতা।
মাহাবুব বলেন, আগামীতে কী হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। মোদি অবশ্য বলেছেন তার আমলে পানি চুক্তির সমাধান করবেন। কখনও চুক্তিতে স্বাক্ষর করতেও পারেন।
এই প্রসঙ্গে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে জনগণের প্রত্যাশা জন্মানো স্বাভাবিক ছিল। তাদের তীব্র প্রত্যাশা ছিল- সীমান্ত হত্যা বন্ধের একটা সুরাহা করে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, পৃথিবীর কোথাও সীমান্তে এতো মানুষ হত্যার ঘটনা শোনা যায়নি, যা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হয়। এই সীমান্তে বছরে কয়েকশ লোক মারা যায় বিএসএফএ’র গুলিতে।
Advertisement
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে তিনি জানান, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে, মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের সীমান্তে এবং জার্মানি ও লুক্সেমবার্গের সীমান্তে কখনই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। এসব সীমান্ত শান্তিপূর্ণ থাকে। এ ক্ষেত্রে আরো দেখা গেছে, বড় দেশের পাশে ছোট দেশের সীমান্ত থাকার পরও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে না।
তিনি বলেন, জনগণ সীমান্ত হত্যা বন্ধে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক প্রত্যাশা করেছিল। একই সঙ্গে পানি নিয়ে ভালো চুক্তি হবে সেটাও জনগণের প্রথম সারির প্রত্যাশা ছিল।
এসময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকে দৃষ্টিপাত করে এমাজউদ্দীন বলেন, ভেবেছিলাম উত্তরবঙ্গের গরিব মানুষদের মুখের দিকে তাকিয়ে মমতা পানির বিষয়ে ছাড় দেবেন। কিন্তু নিজের ক্ষমতা ও স্থানীয় জনপ্রিয়তা রক্ষায় মমতা পানি দিলেন না। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয় নিয়ে দেশের মানুষ হতাশ।
তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি পাটজাত পণ্য রফতানিতে ‘এন্টি ড্যাম্পিং’র বিষয়ে দুই দেশের জনগণ আলাপ আলোচনা প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশাও পূরণ হয়নি।
এমএম/এসএইচএস/এমএস