টানা দুদিনের বৃষ্টিতে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের বোরো ধান এখন পানির নিচে। হাওরের সর্বত্র এখন পানি আর পানি। কৃষকদের ফলানো ধানের ওপর দিয়ে এখন চলছে নৌকা। জেলার সর্বত্র চলছে হাহাকার।
Advertisement
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর, সোনাদীঘি, কাওয়াদীঘির হাওর ও কইরকোনা বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৭ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমি পানির নিছে তলিয়ে গেছে।
এভাবে বৃষ্টি ও ওপর থেকে পানি নেমে আসলে আরও অনেক ফসল তলিয়ে যাবে বল ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার কাঞ্জার হাওর, মানিক হাওর, হাইল হাওর ও কাউয়াদীঘি হাওরে ১০ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৬২২ হেক্টর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরে ৯ হাজার ৫৬৬ হেক্টর জমির মধ্যে ৩০৭ হেক্টর, রাজনগর উপজেলার সোনাদীঘি, কাইয়াদীঘি ও সিঙ্গাহুরা হাওরে ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমির মধ্যে ১ হাজার ৩৬৬ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওরে ৩ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৩০০ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর, ডলডল হাওর, রফিনগর হাওর, খাদিমপাড়া হাওর, আলিয়ার হাওর, বহিষমারা বলি, মেঘাবিল, হাওর বিল, কালাপানির বিল, পালের বিল, হাগুয়া বিল ও লাউয়র বিলসহ অন্যান্য বিলে ৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪৫০০ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর, মালাম বিল ও হুয়ালা বিলে ৪ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির মধ্যে ৩ হাজার ৪১৫ হেক্টর, জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওর ও কইরকোনা বিলে ৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
Advertisement
বিশেষ করে জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। উপজেলার ১৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমির মধ্যে তলিয়ে গেছে ১২ হাজার ৫৬০ হেক্টর।
ধান কাটার উপযোগী না হওয়া কেউই ঘরে নতুন ধান তুলতে পারেননি। পানি এভাবে বাড়তে থাকলে বাকি অংশটুকুও তলিয়ে যাবে বলে জানান কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই তিন উপজেলার বেশির ভাগ কৃষক বিভিন্ন ব্যাংক, সমিতি ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ এনে জমি চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কীভাবে মানুষের ঋণ পরিশোধ করবেন আবার কীভাবে সংসার চালাবেন এনিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল নবাবগঞ্জবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বীরেন্দ্র কান্তি জানান, ভুকশিমইল ইউনিয়নের কোনো কৃষক একমুঠো নতুন ধান ঘরে তুলতে পারেননি। কৃষকদের মধ্যে হাহাকার বিরাজ করছে।
Advertisement
কৃষক কালা মিয়া জানান, ভাই গ্রামীণ অফিস থেকে ঋণ নিয়ে অন্যের জমি চাষ করেছিলাম কিন্তু সব ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিবার কীভাবে চালাবো চিন্তা করে কুলকিনারা পাচ্ছিনা।
এ বিষয়ে হাওর বাঁচাও ও কৃষি বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হলে তারা বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জের বুড়িকিয়ারী নদী খনন না করার কারণে হাকালুকি হাওরের পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। যার ফলে দু-একদিনের বৃষ্টির কারণে পুরো হাওরটি তলিয়ে যায়। তাদের দাবি এ অঞ্চলের কৃষকদেরকে বাঁচাতে হলে যতদ্রুত সম্ভব ওই খালটি খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৩২ হেক্টর বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে এ জেলার আরও বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশষ্কা কয়েছে।
এমএএস/জেআইএম