মতামত

কঠোর শাস্তির বিকল্প নেই

ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। ইলিশের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখার লক্ষ্যে ‘জাটকা ইলিশ ধরবো না, দেশের ক্ষতি করবো না’ এই স্লোগানে গত ১১ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০১৭’ পালিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে যে উদ্দেশে এই জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করা হয় তা কতোটা বাস্তবায়িত হয়েছে সেটা বলে দিচ্ছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়ত থেকে দেড়টন জাটকা জব্দ করার মধ্য দিয়েই। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে যাত্রাবাড়ীর খান মার্কেটের পূবালী মৎস্য আড়তে তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি আকৃতির জাটকা বিক্রির দায়ে দুজনকে একবছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।এছাড়াও তাদের সহযোগিতা করায় দুজনকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন স্থানে অভিযানে জাটকা ধরা পড়েছে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় জাটকা শিকারী, সংরক্ষণ ও বিক্রয়কারীদের কঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই।

Advertisement

ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ ও সম্পদই নয়। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে ইলিশের ওপর। অর্থনীতিতেও রয়েছে বিরাট অবদান। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১৩ ভাগ (যার আনুমানিক অর্থমূল্য আট হাজার ১২৫ কোটি টাকা) আসে ইলিশ মাছ থেকে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় দুই শতাংশ। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। পৃথিবীর সব দেশেই এ মাছের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। যদি প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ থাকে তাহলে ২১ থেকে ২৪ হাজার কোটি নতুন পরিপক্ব ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে বছরে সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যের ইলিশের বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে বাংলাদেশে।

সম্ভাবনার ইলিশকে তাই রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এটা করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। যারা ইলিশের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তাদের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ মৌসুমে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এমন ১৫টি জেলার ২ লাখ ২৪ হাজার ১০২ জেলেকে পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। এটা খুবই কার্যকর একটি পন্থা। ভবিষ্যতে এর আওতা আরো বাড়ানো যায় কিনা সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। তবে জেলেদের দায়িত্ব হচ্ছে নগদ প্রাপ্তির লোভ ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অসময়ে জাটকা ইলিশ না ধরা। যদি সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে জাটকা ইলিশ ধরা হয় সেটি হবে আত্মঘাতী। জাতীয় স্বার্থে জাটকা ইলিশ না কেনাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মানুষের কাছে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এইচআর/পিআর

Advertisement