দেশজুড়ে

দুই জঙ্গির ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুত কাশিমপুর কারাগার

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির ক্ষণ গণনায় থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হুজি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি যেকোনো মুহূর্তে কার্যকর হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ হাতে পেলেই দুই জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

রোববার বিকেলে গাজীপুরে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফাঁসি কার্যকরের নির্বাহী আদেশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কারাগারে এলে এবং নির্দেশনা পেলেই কারা বিধি মোতাবেক হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। রোববার বিকেল পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের আদেশ হাতে এসে পৌঁছায়নি বলে জানান তিনি।

কাশিমপুর কারা সূত্র জানায়, শনিবার রাতে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু করা হয়। জল্লাদদের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের ফাঁসির মহড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Advertisement

এ কারাগারে ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা মুফতি হান্নান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি শরিফ শাহেদুল আছেন। মামলার অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।

এ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে।

উচ্চ আদালতের আপিল শুনানি ও রিভিউ খারিজের পর তাদের ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই। মার্চের শেষ সপ্তাহে দুই ধাপে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন। তবে শনিবার রাতে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

Advertisement

সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন।

এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন। এ ঘটনায় ২০০৪ সালের ২১ মে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।

এক সময় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতৃত্বদানকারী মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলার অভিযোগ ছাড়াও নাশকতার অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ একশ’রও বেশি মানুষকে হত্যার ঘটনায় নাম এসেছে তার। অন্তত ১৩টি মামলায় তার বিচার চলছে।

২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় করা মামলায় মুফতি হান্নানের নাম আসে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলাতেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। সেই সঙ্গে এসব অভিযোগে মামলা হয়।

২০০৭ সালের ৭ জুন মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ, শরীফ শাহেদুল ও দেলোয়ারকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

ওই বছরের ৩১ জুলাই চারজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরের বছর আবু জান্দালকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর নিম্ন আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।

নিম্ন আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে যায়। এ ছাড়া আসামিরা আলাদা আপিল করেন। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে এই ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শুরু হয়।

তিন দিনে রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক উপস্থাপন শেষ করে। এরপর ছয় দিন ধরে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করে।

আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ, মোহাম্মদ আলী ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর। ৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ হয়।

মোঃ আমিনুল ইসলাম/এএম/জেআইএম