চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাসভবন রাইসিনা হিলে রয়েছেন তিনি। সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার দুই দেশের মাঝে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তির কোনো সুরাহা হয়নি।
Advertisement
তিস্তা চুক্তি নিয়ে শিগগিরই সমাধান অাসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এই মুহূর্তে দুই দেশের সম্পর্কে বাঙালির আতিথেয়তার গল্প যেন ফিরছে সবার মুখে মুখে।
শনিবার দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছয়জন রাঁধুনি সফর সঙ্গী হয়েছে। এই রাঁধুনিরাই ইলিশের তিন রকম পদ রান্না করেন।
কিন্তু প্রণব মুখার্জির জন্য ভাপা ইলিশ রান্নার সময় এগিয়ে যান শেখ হাসিনা। নিজ হাতে রান্না করেন ভাপা ইলিশ।
Advertisement
এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও ছিলেন রাইসিনা হিলে। মমতার জন্যও রান্না করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী রাতের খাবার এতো তাড়াতাড়ি গ্রহণ করেন না বলে জানিয়ে শুধু মুড়ি-বাতাসা খেয়েই ফিরে আসেন।
পশ্চিমবঙ্গের একটি বাংলা দৈনিক বলছে, ‘প্রণব মুখার্জিকে বরাবরই বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করেন হাসিনা। রাষ্ট্রপতির বাঙালি স্ত্রীর সঙ্গেও হাসিনার মধুর সম্পর্ক ছিল। রাষ্ট্রপতি ভবনেই হাসিনা অতিথি হিসাবে রয়েছেন। আর সেখানেই তিনি নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন’।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির জন্য ঢাকাই মসলিনের পাঞ্জাবি, মমতার জন্যও ছিল হাসিনার উপহার ঢাকাই জামদানী। শনিবার রাতে হাসিনার রান্নায় নৈশভোজের আগে মমতা ব্যানার্জিও হাসিনাকে কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টিঘর রাধামন মল্লিকের মিষ্টি ও শাল উপহার দেন।
শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজে ছিল হরেক রকম পদ। লুচি, ছোলার ডাল, পোলাও, পাবদা, ভেটকি, গলদা চিংড়ি মামলাইকারি, মুরগির মাংস, মিষ্টি দই এবং রসগোল্লা। আর ছিল বাংলার প্রসিদ্ধ গন্ধরাজ লেবু। মোদি জানতেন গন্ধরাজ লেবু হাসিনার খুবই প্রিয়। তাই একই টেবিলে প্রধানমন্ত্রী মোদি, হাসিনা, মমতা। একটু দূরে অন্য একটি টেবিলে বসেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত বসু, কেন্দ্রী প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং বিজেপি সাংসদ রুপা গঙ্গোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সাদরে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে মমতাকে হাসিনার সঙ্গে একই টেবিলে বসান।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সৌগত বসুর বাবা শিশির বসুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্র ধরে সৌগত বসুর মা প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসুর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চান হাসিনা। পদ্মানদীর মাঝির ‘কপিলা’ রূপার সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন হাসিনা।
মধ্যাহ্নভোজের আগে কলকাতা-বাংলাদেশ বাস এবং ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধন করেন মোদি ও হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মমতাও। হায়দরাবাদ হাউসে দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানোর সময়ে হাসিনার প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র কাছে হাসিনা তার গলায় গান শোনার অনুরোধ জানান। বাবুল বলেন, যখন বলবেন, তখনই গান শোনাব।
এসআইএস/আরআইপি