মনোগহীনের দুঃখ-যাতনা যে ভুবনে বির্সজন দেয়া যায়, অমীয় প্রেমের সন্ধান যে ভুবনে লাভ করা যায়, নিজেকে বিলীন করে দেয়া যায় যে ভুবনে- তার নাম কাব্যভুবন। কাব্যভুবন কাউকে নিরাশ করে না। কাউকে রিক্ত হস্তে ফিরিয়ে দেয় না। এমনই এক ভুবনের খোঁজ দিয়েছেন কবি ও গীতিকার নুরুল ইসলাম মানিক। ‘নীলিমায় মধুর ক্যান্টিন’ শীর্ষক কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি পাঠকদের আনন্দলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
Advertisement
কবির কাব্যভুবনে প্রবেশের আগে কবি সম্পর্কে এক ঝলক জেনে নেওয়া যাক। নুরুল ইসলাম মানিক সত্তর দশকের অন্যতম কবি ও গীতিকার। শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের সব শাখায় তিনি সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তার লেখা সহাস্রাধিক গান বাণীবদ্ধ হয়ে দেশের খ্যাতিমান শিল্পীদের কণ্ঠে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত সম্প্রচারিত হচ্ছে। কবিতায় নতুন নতুন শব্দ ও চিত্রকল্প তার কবিতাকে পাঠকের কাছে বিশিষ্ট করে তুলেছে।
প্রেম, দ্রোহ, বাস্তবতা-পরাবাস্তবতা, নস্টালজিয়া, দেশ ও সংস্কৃতির চিরায়ত ঐতিহ্য তার কবিতায় গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। কবি নুরুল ইসলাম মানিককে কাব্যভুবনের অতন্দ্র প্রহরী বললেও অত্যুক্তি হবে না। কেননা তিনি তার এ কাব্যগ্রন্থের কবিতার ছত্রে ছত্রে তুলে ধরেছেন আমাদের প্রাচীন সমাজ সভ্যতার দিনলিপি।
‘নীলিমায় মধুর ক্যান্টিন’ কাব্যগ্রন্থের ‘তাহুতি সুন্দরী’ শিরোনামের কবিতায় তিনি চিত্রিত করেছেন আরব্য রজনীর উপাখ্যানের তাহুতি সুন্দরীর মায়াময় ঘটনার কথা। এ কবিতায় তিনি লিখেছেন- ‘আমাকে পরিত্রাণ দাওহে আরব্য রজনীর তাহুতি সুন্দরী!রূপান্ধ প্রেমিক আমি, বড় ভুল করেএসেছি এই কুহক নগরে।এই নগরের পথঘাট সবই অচেনা আমারএতো মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছো কেনো?’
Advertisement
‘শব্দে শব্দে’ নামের কবিতায় তিনি লিখেছেন তার আত্মকথন। তুলে ধরছেন কাব্যভুবনের অমরাবতীর সন্ধান কীভাবে পেলেন- সেই কথা। কবির ভাষায়- ‘কবিতা লেখার ইচ্ছে কখোনো ছিলো নাকবি হওয়া তো দূরের কথা।কিন্তু আমাকে শব্দের হাটে ফুসলিয়ে এনেকখন যে বিক্রি করে দিয়েছো, নিলামে-আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।’এই কবিতার শেষান্তে তিনি হৃদয়ের সুতীব্র যন্ত্রণা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মত উগড়ে দিয়েছেন। কবি লিখেছেন-‘সেই থেকে আমি শব্দের তীব্রতা বুঝেছিকলসীর দুঃসহ যন্ত্রণা বুঝেছিশব্দের হাটে কতবার নিলামে উঠেছিনিজের মূল্য কতবার জেনেছি-আমি যদি সেই শব্দগুলো তোমাকে ফিরিয়ে দেইতবে কি কবি বলে অপবাদ দেবে নাতো?’
তিনি ‘প্রিয় বর্ণমালা’ কবিতায় প্রাণের বর্ণমালার প্রতি সুগভীর প্রেম-বন্ধনের কথা বলেছেন। এ কবিতার শেষে তিনি লিখেছেন- ‘আর আকাশে ভাসে পালের নৌকার মত-আমার প্রিয় বর্ণমালা’।
‘নীলিমায় মধুর ক্যান্টিন’ কবিতায় কবি নিজেকে আকণ্ঠ নস্টালজিয়ায় ডুবিয়ে রেখেছেন। এ কবিতায় তিনি মর্ত্যবাসী সর্বজনপ্রিয় কবি আবুল হাসানকে দেখতে পেয়েছেন। এ কবিতায় কবির বিশুদ্ধ উচ্চারণ-‘দূর থেকে কারা যেন চিৎকার করে বলেকবি আবুল হাসানমর্ত্যলোকে দুঃখের বাণিজ্য-বেসাতি ছেড়েফিরে এসেছেন জ্যোতির্ময় মধুর ক্যান্টিনে।’
‘পরী’ নিয়ে এ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে একটি ভিন্নমাত্রার কবিতা। ‘পরী’ নামের কবিতায় তিনি লিখেছেন-‘রাত্রির বাগানে সে আসেমায়াবী নদীর মতো নারীআমাকে সে ডেকে নেয় বাহুপাশেএবং ঘাসের সবুজে আঁকেআলতার গাঢ় ছাপ।বলে, পরী ও কবির প্রেম কী পাপ!’
Advertisement
এছাড়া ‘আমার পতাকা’, ‘আমার অস্তিত্ব’, ‘তুড়ি মেরে’, ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘পতাকার মিছিলে’, ‘হৃদপিণ্ড ছুঁয়ে দেখা’সহ হৃদয়ে ছুঁয়ে যাওয়া একাধিক কবিতা রয়েছে এ কাব্যগ্রন্থে।
‘নীলিমায় মধুর ক্যান্টিন’ কাব্যগ্রন্থে মোট ৪৯টি কবিতা রয়েছে। চিত্রশিল্পী জসিম উদ্দিনের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ঝিঙেফুল। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। একজন পাঠক হিসেবে গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার কামনা করছি।
এসইউ/এমএস