বিশেষ প্রতিবেদন

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্ন এখন ‘সুইচ’

পেট ভরে খাওয়া হয় না তিনবেলা। পড়ালেখা ওদের কাছে অধরা। আর ছবি আঁকা -সেতো অষ্টমাচার্য। ওরা সুবিধাবঞ্চিত শিশু। কেউ বলে ‘পথশিশু’। অন্য আট-দশ শিশু থেকে আলাদা তাদের জীবন। স্নেহের দৃষ্টিতে তাকায় না কেউ। পথে-ঘাটে অন্যের বকুনি খেয়ে দিন কাটে ওদের। তবুও আড়াল থেকে স্বপ্ন দেখে তারা, সুযোগ পেলে লেখাপড়া করবে। নিজের মতো রাঙাবে পৃথিবীটাকে।

Advertisement

ওদের এ আক্ষেপের অবসান ঘটানোর ক্ষুদ্র চেষ্টা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীদের। ২০১১ সালে তারা প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুইচ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

দীর্ঘ ছয় বছরে অনেকটা বড় হয়েছে সংগঠনটির কাজের পরিধি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সহযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত সংগঠনটি। তবে তাদের প্রধান লক্ষ্য পথশিশু ও শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষাদান এবং ওদের মাঝে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা কাজে লাগিয়ে জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার তৈরি করা, যা আধুনিক ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

সংগঠনটির উদ্যোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘সুইচ বিদ্যা নিকেতন’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত স্কুলটিতে প্রজেক্টরে ক্লাস, কম্পিউটার ল্যাব, খেলাধুলার উপকরণ রয়েছে। বর্তমানে ৭৭ পথশিশু বিদ্যালয়টিতে শিক্ষাগ্রহণ করছে। রয়েছেন দুজন নিয়মিত শিক্ষক।

Advertisement

পাঠ্যবইয়ের পাঠদানের পাশাপাশি চারুকলার শিক্ষার্থীরা স্কুলটিতে ছবি আঁকাও শেখান। সম্প্রতি ওদের কয়েকজনকে নিয়ে আসা হয় ঢাবির চারুকলা বিভাগে। পুরো চারুকলা ঘুরে দেখে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। শেখে নতুন নতুন ছবি আঁকা। জানতে পারে ছবি আঁকার জগৎ সম্পর্কে।

মোহাম্মদ রিয়াজ। সংগঠনটিতে লেখাপড়া করা ৭০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুর একজন। আগে রাস্তাঘাটে দুষ্টুমি এবং খারাপ কাজে সময় পার করলেও এখন স্কুলে সে নিয়মিত। বড় হয়ে আদর্শ সাংবাদিক হতে চায় রিয়াজ।

সুইচ’র সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুল ফয়সাল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের লেখাপড়ার ফাঁকে অনেক সময় থাকে। যেগুলো আমরা অন্য জায়গায় আড্ডার দিয়ে পার করি। যদি সে সময় থেকে কিছু সময় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দিতে পারি তাহলে নিজেদের কাছেই আত্মতৃপ্তি লাগবে। সবারই উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।

জানা গেছে, ‘সুইচ’ শিশুদের স্কুলড্রেস, ব্যাগ, পড়ালেখার উপকরণসহ দুই ঈদে নতুন পোশাক এবং মাঝে মধ্যে খাবার দিয়ে থাকে। বুয়েট, ঢাবির কয়েকজন শিক্ষক এতে অর্থ দেন। এছাড়া ৩০ জনের বেশি ব্যক্তিগত ডোনার রয়েছেন। যারা প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে সহযোগিতা করে আসছেন।

Advertisement

সংগঠনটির সেচ্ছাসেবীর সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে ঢাবি, বুয়েট ও ঢামেকের বাইরেও অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। সংখ্যায় প্রায় ৮০ জনের মতো। তারা মাসে দুটি করে ক্লাস নেন।

ইতোমধ্যে সংগঠনটির অর্জনের খাতায় যোগ হয়েছে অনেক কিছু। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা এখন শুধু অক্ষরজ্ঞানই নয়, তারা বড় হওয়ার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে তাদের মা-বাবাও সচেতন হচ্ছেন।

এমএইচ/আরএস/এমএআর/এমএস