চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তরের লক্ষ্যে রাজধানীর হাজারীবাগের বেশির ভাগ ট্যানারির বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পানি-সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬০টি ট্যানারির। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষকে (ঢাকা ওয়াসা) সঙ্গে নিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু করে। বেলা দুইটা নাগাদ হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো উৎপাদন কার্যক্রম একদম বন্ধ হয়ে গেছে।
Advertisement
গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান আজো চলবে। উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট হাজারীবাগ ছাড়তে ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। পরে এ রায় সুপ্রিম কোর্টে বহাল থাকে। ট্যানারি মালিকেরা ঈদুল আজহা পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করলে তা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে ১০ এপ্রিলের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে ট্যানারি মালিকেরা আর কোনো আইনি লড়াইয়ে না যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু হয়।
সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা গ্রামে ১৯৯ একর জমির ওপর চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে ১৫৫টি ট্যানারি শিল্প-কারখানাকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। নানা কারণেই ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ট্যানারি শিল্পের বর্জ্যে নদী দূষণ হচ্ছে। মানব সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্যের থেকেও মারাত্মক এই ট্যানারির জৈব বর্জ্য। কিন্তু এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। নদী দূষণ নিয়ে এত কথা, এত লেখালেখি, পরিবেশ সংগঠনগুলোর আন্দোলন এমনকি খোদ হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও তা বন্ধ হচ্ছে না। বিশেষ করে ট্যানারির বর্জ্যে নদীর মরাত্মক দূষণ হলেও এখনও তা বন্ধ হচ্ছে না। হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা একযুগেও কার্যকর হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হলেও হাজারীবাগে এখনও অনেক ট্যানারি রয়েছে। আর এই ট্যানারির তরল বিষাক্ত বর্জ্য স্থানীয় জলাশয় থেকে হাজারীবাগ খাল হয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বাঁধের ভেতরের স্লুইসগেটসহ নানা পথে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে মেশে।
ট্যানারির বর্জ্য অত্যন্ত বিষাক্ত। এই বর্জ্য পানিতে মিশলে তা দেখে মনে হবে রং মেশানো পানির মতো। আর এই রঙিন পানিই দিনের পর দিন নদীতে গিয়ে পড়ে নদীর পানিকে কী পরিমাণ দূষিত করছে তা সহজেই অনুমেয়। শুধু নদী-দূষণ নয় সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণ রোধে ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যে সমস্ত প্লট মালিকরা বরাদ্দ নিয়েও এখনো কারখানা সরিয়ে নেননি তাদের বিরুদ্ধে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান চলছে। এবার সাভারে না গিয়ে তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। আমরা চাই সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হোক। শিল্প মালিকরাও এক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।
Advertisement
এইচআর/এমএস