হাতিরঝিল, বিনোদন স্পট হিসেবেই রাজধানীবাসীর কাছে পরিচিত। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই হাতিরঝিলের রঙ-বেরঙের আলোর ঝলকানির মধ্যে বিনোদন খুঁজে বেড়ান রাজধানীর মানুষ।
Advertisement
আশপাশের অনেকে আবার ‘সুইমিংপুল’ হিসেবে হাতিরঝিলের মধুবাগ পয়েন্টে গোসল করেন। সাঁতরে গোসল সারেন খেটে খাওয়া মানুষ। এর মধ্যেই কেউ হয়তো ফিরে যান শৈশবের দিনগুলোতে। নদী কিংবা পুকুরে সাঁতার কাটার সেই আনন্দ কি ভোলা যায়!
শনিবার দুপুরে হাতিরঝিলে গিয়ে সাঁতরে গোসল করার এমন দৃশ্য দেখা মেলে। এদিন কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের উদ্যোগে গণগোসলের আয়োজন করা হয়।
সংগঠনগুলোর ডাকে সাড়া দিয়ে অর্ধশত নিম্ন আয়ের মানুষ গোসলে অংশ নেয়। এ সময় তারা বলেন, ‘নামি-দামি সুইমিংপুলের নাম শুনেছি। কখনও তো যাওয়া হবে না। তাই আজ হাতিরঝিলের পানিতেই সুইমিংপুলের আনন্দ নিয়ে গোসল করছি।’
Advertisement
ন্যাংটা শিশুর দল উদ্যম নৃত্যের তালে তালে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝিলের পানিতে। আর তাদের উৎসাহ দেয় পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো। কিন্তু একটু ক্ষোভ দেখা গেল সাধারণের মধ্যে। সাধারণের সঙ্গে গায়ে জল ছোঁয়ালেন না আয়োজক সংস্থার কেউই।
ঝিলের পানিতে স্নান করতে করতে সাধারণের দাবি, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য হাতিরঝিল সবসময় যেন উন্মুক্ত রাখা হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষে এ সময় দাবি জানানো হয়, রাজধানীর সব সরকারি খালগুলো দখলমুক্ত করা জরুরি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এসব খালে সাধারণ মানুষ গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারতে পারবে।
সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ইবনুল সাঈদ রানার সভাপতিত্বে গণগোসল উৎসবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, এলআরবি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সুলতানা রিজিয়া, অরুণোদয়ের তরুণ দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবু, সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম সোভন, স্বপ্নের সিঁড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উম্মে সালমা, YSSE এর প্রধান নির্বাহী শেখ মো. ইউসুফ হোসেন, SAYRID এর প্রধান নির্বাহী জুয়েল রানা প্রমুখ।
Advertisement
বক্তারা বলেন, তিন দশক আগেও রাজধানী ঢাকা ছিল দৃষ্টিনন্দন পুকুর, খাল ও ঝিলের শহর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ভরাট ও দখলের কারণে এসবের অস্তিত্ব এখন নেই। রাজধানী হয়ে উঠেছে ইট-পাথরের শহর। প্রাকৃতিক এসব পানির আধার না থাকা, তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট এবং পরিবেশের বিপর্যয় ঘটেছে।
তারা বলেন, ১৯৮৫ সালে রাজধানীতে দুই হাজার পুকুর ছিল। শুধু পুকুর নয়, প্রায় ৪৪টি স্রোতস্বিনী খাল ছিল। সচেতনতা ও পরিবেশবান্ধব চিন্তা এবং নগর উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে নগরীর পুকুর, ঝিল ও খাল হারিয়ে গেছে। যে অল্পসংখ্যক পুকুর রয়েছে, সেগুলোও অস্তিত্ব সংকটের মুখে।
বক্তারা আরও বলেন, রাজধানীর জনসংখ্যা এখন প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ জন। এ জনসংখ্যার সঙ্গে প্রতিদিন গড়ে যুক্ত হচ্ছে এক হাজার ৭০০ মানুষ। এত অধিকসংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলানের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনাও নেই। এর ফায়দা নিচ্ছে অবৈধ দখলকারীরা।
তারা অভিযোগ করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গোচরেই এসব খাল, পুকুর ও ঝিল দখল হয়েছে। যদি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলো সংরক্ষণ করা যেত, তবে রাজধানীর এ করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
রাজধানীকে কিছুটা হলেও বসবাস উপযোগী করতে অবশিষ্ট যে ক’টি পুকুর, ঝিল ও খাল রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করে অবৈধ দখল হওয়া জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করতে উদ্যোগী হতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
গণগোসল উৎসবে বক্তারা হাতিরঝিল প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি পুকুর, খাল ও ঝিল রক্ষায় আরও কঠোর উদ্যোগ নেয়ারও অনুরোধ জানান।
জেএ/এমএমএ/এমএআর/জেআইএম