বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত সম্প্রসারণের পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম কিনতে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত।
Advertisement
শনিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
মোদি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সামরিক সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশের চাহিদাই প্রাধান্য পাবে।’
Advertisement
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে সম্ভাব্য এ চুক্তির বিষয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা সমঝোতার সরাসরি বিরোধিতা করা হয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব খর্বের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে জানতে পারবেন। আমরা কোনো কিছু গোপন করব না, যখন হবে তখন জানিয়ে দেব।
তিনি আরও বলেন, যথাসময়ে দেখতে পাবেন। তবে ধৈর্য ধরতে হবে।
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মধ্যে চারটি চুক্তিপত্র অনুষ্ঠানে বিনিময় হয়।
Advertisement
এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সাড়ে চারশ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
হায়দরাবাদ হাউসের ডেকান স্যুটে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন করে দুটি রুটে বাস ও ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। সেই সঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণেরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
পরে বল রুমে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। তবে এতে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ ছিল না।
মোদি তার বক্তব্যের শুরতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি আসছে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে উভয় দেশের জনগণকে অগ্রীম বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
মোদি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ভারতের সৈন্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও শ্রদ্ধার কথা জানান।
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা চুক্তির সমাধান খুব শিগগিরই হবে। এটি আমাদের সরকারের আমলেই হবে। এ জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ একই সঙ্গে তিনি অভিন্ন নদীর পানির সুষ্ঠু বণ্টনের কথাও জানান।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার এ সফর ঘিরে শুরু থেকেই তিস্তা চুক্তির বিষয়টি আলোচনায় ছিল।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই। এ কারণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে আরও পাঁচশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তির যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যার মাধ্যমে দু’দেশের তরুণরা উপকৃত হবেন।
জঙ্গি দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বিষয়টি ‘প্রশংসনীয় উদ্যোগ’ বলেও জানান।
মোদির পর কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারতের উপর আস্থা আছে বাংলাদেশের। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ভারতীয় জনগণকে ধন্যবাদও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয়া হয় শেখ হাসিনাকে। ভারতের তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৫ সালের জুনে মোদির ঢাকা সফরে দু’দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এমএআর/জেআইএম