অনেক তারকাদের সন্তানরাই বাবা-মায়ের পথ ধরে শোবিজে পথচলা শুরু করেন। কিন্তু সেইসব সন্তানরা তাদের বাবা-মায়ের তারকাখ্যাতির বলয়ের বাইরে গিয়ে খুব কমই পারেন নিজেদের আলাদা করে মেলে ধরতে। অনেকে আবার সেই চেষ্টাটাই করেন না। এক্ষেত্রে বাহবা দিতে হয় ড্যাশিং হিরো সোহেল রানার পুত্র মাশরুর পারভেজকে। তিনি চেষ্টা করছেন বাবা সোহেল রানার সুনামের বাইরে গিয়ে নিজেকে স্বকীয়তায় প্রতিষ্ঠিত করতে।
Advertisement
মাশরুর ইয়ুল রাইয়ান নামেও পরিচিত। গেল বছর ‘অদৃশ্য শত্রু’ নামের একটি ছবি দিয়ে অ্যাকশান হিরো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি সেই ছবিটির দুজন পরিচালকের একজন ছিলেন তিনি।
মন্দার বাজারে ছবিটি তেমন ব্যবসা সফল না হলেও আলোচিত ছিলেন মাশরুর। তবে চলতি বছরে নতুন করে নতুন পরিচয়ে আসছেন তিনি। এই বছরেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার চিত্রনাট্য ও একক পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রাইয়ান’। বলা চলে এই ছবিটি দিয়েই পূর্ণ পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটছে তার। ‘রাইয়ান’ আগামীকাল রোববার (৯ এপ্রিল) সেন্সরে জমা পড়ছে।
এখানে তিনি নিজে অভিনয়ও করেছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। তবে অ্যাকশান ইমেজকে ঝেড়ে ফেলে মাশরুর আবির্ভূত হচ্ছেন একজন নিপাট অভিনেতা হিসেবে। তার ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন লাক্স তারকা অর্ষা, ফারুক আহমেদ প্রমুখ। কিংবদন্দি অভিনেতা সোহেল রানাকেও দেখা যাবে এক ঝলক।
Advertisement
ছবিটি নিয়ে মাশরুর পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমেই আমি বলতে চাই, এই ছবিটি আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট। এখানে আমার বাবার বলয়ের বাইরে গিয়ে আমি নিজে কিছু তৈরি করার চেষ্টা করেছি। যা আমি ভেবেছি তাই চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করেছি। বাবার সাহায্য বলতে তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারটি আমি ব্যবহার করেছি। একজন নির্মাতা হিসেবে এটুকু সাহায্য সবাইকে নিতে হয়। আমি চাই আমার নিজের যোগ্যতা দিয়ে বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে। আমার এই সংগ্রামকে আমার বাবা সমর্থন করেছেন। তিনি অনেক খুশি হয়েছেন আমার উৎসাহ ও আগ্রহ দেখে। আমি চাই ছবিটি দেখে প্রশংসা হলে আমারই হোক, সমালোচনা হলেও আমারই হোক।’
ছবি নির্মাণের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছবিটি বানাতে গিয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতা ও প্রতিবন্ধকতা আমাকে ফেস করতে হয়েছে। আমি অনুধাবন করেছি তথ্য প্রযুক্তির এই চরম উন্নয়নের এই যুগেও আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো গতানুগতিক ভাবনার বাইরে গিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি না আমরা। আমাকে অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে ছবির নায়ক কে, নায়িকা কে, কয়টা মারপিটের দৃশ্য আছে, কয়টা গান আছে ইত্যাদি। অথচ উন্নত বিশ্বের কোথাও এ ধরণের প্রশ্ন শোনা যায় না। তারা চলচ্চিত্র বানায় একটি গল্পকে ক্যামেরায় জীবন্ত করে তোলার জন্যই। তার জন্য দক্ষ এবং জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নায়ক-নায়িকা থাকতেই হবে এমন কোনো কিছু নয়।
গল্পের প্রয়োজনে মারপিট, গান বা মিউজিক থাকতে পারে। কিন্ত অযৌক্তিভাবে এসব রাখতেই হবে এমন টেন্ডেসি থাকে না। কিন্তু আমাদের এখানে আছে। একজন পরিচালক হিসেবে ছবি সেন্সরে জমা দিতে গেলেও নির্ধারিত ফরমে এইসব উত্তর দিয়ে যেতে হয়। বাধ্য হয়েই ফরমে নায়কের পাশে নিজের নাম লিখেছি, নায়িকা হিসেবে দিয়েছি অর্ষার নাম। যাক, নানা রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমি ‘রাইয়ান’র কাজ শেষ করেছি। এবার সেন্সরে অনুমতি নিয়ে ছবিটি দর্শকের জন্য প্রেক্ষাগৃহে আনার দিন গুনছি।’
মাশরুর জানান, তার ‘রাইয়ান’ ছবির গল্পটি একজন পরিশ্রমী নতুন চলচ্চিত্র লেখকে নিয়ে। যিনি সংগ্রাম করে চলেছেন সাফল্যের জন্য। ভাগ্যক্রমে তিনি একজন স্বনামধন্য পরিচালকের সন্ধান পান। কিন্তু সাক্ষাতটি তার পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় না। ঘটনাক্রমে একইদেন ওই লেখকের সঙ্গে পরিচয় হয় একটি মেয়ের। কথা বলতে গিয়ে লেখক ওই মেয়েটির মাঝে রহস্যময় এক অতীতের সন্ধান পান। কী সেই রহস্য তা আবিষ্কারের নেশায় পেয়ে বসে লেখকের মাথায়। অন্যদিকে পারিবারিক কলহে বিধ্বস্ত লেখকের জীবন যাপন। সেই জীবনের দারুণ এক গল্প ও রহস্যময়ী মেয়েটির কাহিনি নিয়েই গড়ে ওঠেছে ‘রাইয়ান’র গল্প।
Advertisement
ছবিটির নির্মাতা মাশরুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার প্রথম ছবিটি ছিলো অ্যাকশন নির্ভর। এবার চেষ্টা করেছি ভিন্ন ভাবনায় নতুন গল্প উপস্থাপনের। আমাদের দেশের দর্শকের রুচি বদলাচ্ছে। তারা এখন মৌলিক গল্পে নির্মাণের মুন্সিয়ানা দেখতে চায়। সেইদিক থেকে এই ছবিটি দর্শকের মনে দাগ কাটবে বলে আমার বিশ্বাস।’
পরিচালক জানালেন, পারভেজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ছবিটি চলতি বছরের শেষদিকেই মুক্তি দেয়া হবে। এলএ