তিন সিটিতে জমে উঠেছে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচার। এ জন্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। তবে এ থেকে পিছিয়ে নেই রাজধানীর উঠতি সন্ত্রাসীরা। ফলে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে উঠতি সন্ত্রাসীরা। আর তাদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করছে প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসীরা। শুধু রাজধানীতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৫ শতাধিক উঠতি সন্ত্রাসী। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ১৬ শীর্ষ সন্ত্রাসীও নির্বাচনী হাওয়ায় প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। কারাবন্দি ও বিদেশ পলাতক সন্ত্রাসীরা আড়ালে থেকেও নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে বিভিন্নভাবে তোড়জোড় চালাচ্ছেন বলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকালে যেসব সন্ত্রাসী ভাড়াটে হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছেন তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। নির্বাচনে কোন এলাকায় কার নেতৃত্ব প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন সন্ত্রাসীদের তালিকাও হালনাগাদ করা হয়েছে। স্থানীয়, রাজনৈতিক, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন উপলক্ষে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। কারাবন্দি ও পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগীরা নতুন করে দল গোছাতে শুরু করেছে। পেশাদার সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় উঠতি সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের মাঠে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এ কারণে শতাধিক সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থী প্রতিপক্ষের হামলার ঝুঁকিতে রয়েছেন।গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে কারাগার থেকেই কলকাঠি নাড়তে শুরু করেছেন তিনি। স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকি সিমিকে দাঁড় করিয়েছেন রাজাবাজারে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তাকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে টুটুল, সাবু, ওয়াহিদ, মিরাজ নামে ভয়ঙ্কর সব উঠতি সন্ত্রাসী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তরের ১৬ ও দক্ষিণের ১৭টি ওয়ার্ড খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন ৭২ কাউন্সিলর প্রার্থী। ইতিমধ্যে গত ১০ দিনে দুই সিটির প্রায় ১৫ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। এসব ওয়ার্ডে যেকোনো মূহুর্তে রক্তক্ষয়ী সাংঘর্ষ হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ করেছেন, সরকার দলীয় প্রার্থীদের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী তৎপরতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার দলীয় প্রার্থী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা অস্ত্র জমা দেয় নি।আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নির্বাচনে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। তারা সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তাদেরকেই রাখা হচ্ছে নজরদারিতে। আর অভিযোগের সত্যতা মিললে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য রাজধানীর ৪৯টি থানার ওসিদের মাধ্যমে ৯২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম-ঠিকানাসহ তাদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, পুলিশ ও র্যাবকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনানুযায়ী সবই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা এবং অভিযান জোরদার করা হয়েছে।র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে জানান, নির্বাচন নির্বিঘ্নে করতে এলাকাভিত্তিক ক্যাম্পগুলোও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।জেইউ/এএইচ/এমএস
Advertisement