দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জেও পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায়। কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষেত। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এদিকে, সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় রাজধানীর মাদারটেকে বালু নদীর পানি ঢুকে পড়েছে।সুনামগঞ্জপ্রবল বর্ষণ ও সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ছাতক উপজেলার দুই লাখেরও বেশি মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত, বীজতলা ও সবজি বাগান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের দেয়া হয়েছে কিছু চাল ও নগদ টাকা।বগুড়াবগুড়ায় সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কামালপুর, চন্দনবাইসা, কুতুবপুর ও কুর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাঁধের ওপরে দিন কাটাতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। বন্যা কবলিত এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ।কুড়িগ্রামকুড়িগ্রামের ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়লেও কমেছে তিস্তা নদীর পানি। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে গত ৯ দিন ধরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে জেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে।সিরাজগঞ্জসিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও তাড়াশ উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের মানুষ। তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর ফসলি জমি।গাইবান্ধাগাইবান্ধায়ও গত দশ দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে রয়েছে চারটি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের ক্ষেত। তার ওপর বিভিন্ন পানিবাহিত চর্মরোগ পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।মুন্সীগঞ্জমুন্সীগঞ্জে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে শ্রীনগর, লৌহজং ও টঙ্গী উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এই তিন উপজেলার বসত বাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। অন্যদিকে, প্রবল স্রোতের কারণে আজ সপ্তম দিনের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ১৬টি ফেরির মধ্যে চলাচল করছে ১৩টি ফেরি। এতে দু`পাড়ে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়েছে।মাদারটেকে বন্যার পানিসংযোগ সড়ক ভেঙে রাজধানীর বাসাবোতে মাদারটেক এলাকায় বন্যার পানি ঢুকছে। সোমবার বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ করেই সংযোগ রাস্তাটি ভেঙে পার্শ্ববর্তী বালু নদের পানি সেখানে ঢোকে। এতে করে চিন্তিত হয়ে পড়েছে এলাকাটির প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার।শেখের জায়গা এলাকার বাসিন্দারা জানায়, রাস্তাটি আগে থেকেই খারাপ ছিল। অনেক দিন এটি সংস্কার করা হয় না। দুপুরের দিকে বালু নদীর পানির তোড়ে সংযোগ রাস্তাটি ভেঙে গিয়ে এলাকাটি প্লাবিত হচ্ছে। পানিতে ভেসে যাচ্ছে মাছের ঘের।হঠাৎ করে বন্যার কারণ জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সিরাজগঞ্জ থেকে সারিয়াকান্দি ও আশপাশের এলাকায় যমুনা নদীর পানি কয়েক দিন ধরে কমছে। সেই পানি ভাটিতে চলে আসছে। ভাটি অঞ্চল ঢাকার আশপাশের নদীগুলোতে তাই পানি বাড়ছে।তিনি জানান, বালু নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচে। কিন্তু সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় মাদারটেকের শেখের জায়গা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর মধ্যে শীতলক্ষ্যার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
Advertisement