চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ (শুক্রবার) সকালে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরের মধ্যদিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর পরে দ্বিপাক্ষিক এই সফরে তিস্তার মতো অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান আশা করছে বাংলাদেশ। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এ বিষয়ে এখনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি ভারত।
Advertisement
তিস্তা চুক্তি না হলেও প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরেই তৃতীয় এলওসির আওতায় ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিসহ প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, মহাকাশ, পরমাণু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞানে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় মোট ৩৩টি চুক্তি, সমঝোতা ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষর করবে দুদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে গুরুত্ব পাচ্ছে মহাকাশ, পরমাণু, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে দুই দেশের পরমাণু সহযোগিতা নিয়ে থাকছে ৪টি চুক্তি ও সমঝোতা। স্যাটেলাইট নিয়ে থাকছে ৩টি চুক্তি ও সমঝোতা। এছাড়া নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় রয়েছে ১২টি চুক্তি, সমঝোতা ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ-মিয়ানমার অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রাঙ্গানাথান বলেন, আজকের দিনে এসে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বেশ শক্তিশালী ও গতিশীল। গত কয়েক বছরে সম্পর্ক বেশ এগিয়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, কানেক্টিভিটিসহ অনেকে ক্ষেত্রে। দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে নিয়মিতভাবে বৈঠক করে থাকেন। ফলে তাদের দিকনির্দেশনায় সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিতে আমাদের সহজ হয়েছে।
Advertisement
বর্তমানে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সাড়ে ৬’শ কোটি ডলার জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ভারতের রফতানি প্রায় ৫৮০ কোটি ডলার। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে আমদানি-রফতানি দুটিই গত কয়েক বছরে বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের উপর। বেশিরভাগ ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করেছে বা শুরু করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। সেইসঙ্গে সামনে আরও বিনিয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সফরসূচিবিমানের বিশেষ ফ্লাইটে শুক্রবার সকাল ১০টায় দিল্লির উদ্দেশে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ১২টায় দিল্লিতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর স্টেশন পালামে পৌঁছাবেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের ভারীশিল্প ও সরকারি প্রতিষ্ঠানবিষয়ক মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অভ্যর্থনা জানাবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হবে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহর রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে রওনা করবে। রাষ্ট্রপতি ভবনে মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিশ্রাম নেবেন। এরপর বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এরপর প্রধানমন্ত্রী বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাবেন। রাতে হাইকমিশনারের বাসভবন ‘বাংলাদেশ হাউজে’ প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নৈশ্যভোজের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশ হাউজে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। নৈশ্যভোজ শেষে তিনি আবারও রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে আসবেন।
শনিবার সকাল থেকেই ব্যস্ত সময় কাটাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। এ সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। ভারতের তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে মহাত্মা গান্ধি মেমোরিয়ালে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানকার অানুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল ১০টার দিকে আবারও রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে আসবেন তিনি।
Advertisement
এরপর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে বেলা সাড়ে ১১টায় হায়দারাবাদ হাউজে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চুক্তি ও সমঝোতাগুলো সই হবে। সেখানেই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর’ হিন্দি ভাষার সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এরপর বাংলাদেশ-ভারত প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের যৌথ বিবৃতি দেয়া হবে। হায়দারাবাদ হাউজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে। মধ্যাহ্নভোজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে আবারও রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে যাবেন।
এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে সাড়ে ৩টার দিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হয়েছেন তাদের মরণোত্তর ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান করবেন প্রধনামন্ত্রী। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে সাতজনের নিকটাত্মীয়দের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক’ এবং সম্মাননাপত্র তুলে দেবেন। এ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন এবং বক্তৃতা দেবেন। প্রাথমিকভাবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এক হাজার ৬৬১ জনকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে যোগদানের পর আবারও রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হামিদ আনসারির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে তার বাসভবনে যাবেন। বৈঠক শেষে সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরের তৃতীয় দিন রোববার সকালে জয়পুর যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে জয়পুর যাবেন তিনি। জয়পুর বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে আজমির শরিফ যাবেন তিনি। এখানে জিয়ারত শেষে হেলিকপ্টার যোগে জয়পুর বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে দুপুর ১টার দিকে আবারও দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবেন। দিল্লি পৌঁছে দুপুরে রাষ্ট্রপতি ভবনে মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিশ্রাম নেবেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করবেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশ্যভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
সফরের চতুর্থ দিন সোমবার সকালে হোটেল তাজ প্যালেসে বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। সে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আবারও ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জেপি/বিএ