ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এর চেয়ে আর বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্য! জয়ের চেয়ে বড় কোনো কিছুই সম্ভবত আর বড় কিছু হতে পারে না। সেই উপহারটিই যোদ্ধা ক্রিকেটার মাশরাফিকে উপহার দিলো বাংলাদেশ। কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে ৪৫ রানের ব্যবধানে হারালো বাংলাদেশ। সে সঙ্গে অধিনায়ক এবং খেলোয়াড় মাশরাফির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে গেলো। এই ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ১-১ ব্যবধানে ড্র করলো বাংলাদেশ।
Advertisement
টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও কেউ জয় পেলো না। ড্র হলো। টেস্ট সিরিজ ড্র হয়েছে ১-১ ব্যবধানে। ওয়ানডে সিরিজে ৩ ম্যাচ থাকলেও ১ ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। প্রথম ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় ড্র হয়েছিল ১-১ ব্যবধানে। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজে শেষ ম্যাচে জয়টা খুব দরকার ছিল। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্য হলেও প্রয়োজন ছিল জয়। অবশেষে সেই জয়টাই মাশরাফিকে উপহার দিলেন দলীয় সদস্যরা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কাকে ১৭৭ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। বোলারদের দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৮ ওভারেই স্বাগতিক লঙ্কানদের ১৩১ রানে বেধে ফেললো টাইগার বোলাররা। দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ২১ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট। সাকিব আল হাসান নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা আবার সাইফউদ্দিনের প্রথম উেইকেট।টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির যেদিন অভিষেক, সেদিন বাংলাদেশেরও অভিষেক। সেই অভিষেক ম্যাচে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে দলকে জিতিয়েছিলেন মাশরাফি। এরপর গত ১০ বছরে খেলেছেন মোট ৫৪টি টি-টোয়েন্টি। উইকেট নিয়েছেন ৪২টি। রান করেছেন ৩৭৭। অভিষেক টি-টোয়েন্টির মত বিদায়ী ম্যাচে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল হতে পারেননি।
অভিষেকে করেছিলেন ২৬ বলে ৩৬ রান। আর বিদায়ে হয়েছেন মালিঙ্গার হ্যাটট্রিকের শিকার। প্রথম বলেই বোল্ড। বল হাতে সেকুগে প্রসন্নকে বোল্ড করেছিলেন তিনি। শেষ ম্যাচে এই একটাই সাফল্য। তবে, প্রথম এবং শেষ- দুই ম্যাচেই দারুণ জয় উপহার দিয়েছেন তিনি বাংলাদেশকে।
Advertisement
বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া ১৭৭ রান টপকাতে নেমে ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও শুভসূচনা পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বল হাতে শুরুতে বাংলাদেশকে শুভসূচনা এনে দেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই কুশল পেরেরাকে (৪) বোল্ড করলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে দ্বিতীয় উইকেট শিকার করলেন সাকিব। এবার তিনি সাজঘরে ফেরালেন দিলশান মুনাভিরাকে। ৪ রান করে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান।
সাকিব শো-এর পর বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা লঙ্কান অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গাকেকে মেহেদী হাসান মিরাজের তালুবন্দী করান তিনি।
নিজের প্রথম বলেই আসেলা গুনারত্নেকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। গুনারত্নেকে মোসাদ্দেকের তালুবন্দী করান কাটার মাস্টার। দ্বিতীয় বলে মিলিন্দা সিরিবর্ধনেকে শিকারে পরিণত করেন তিনি। সিরিবর্ধনের ক্যাচটা নিয়েছেন সাব্বির রহমান।
Advertisement
এর ষষ্ঠ উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়েন কাপুগেদারা ও থিসারা পেরেরা। ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা থিসারাকে ফেরালেন সাকিব। দুর্দান্ত এক ডেলিভারি থিসারাকে মুশফিকুর রহীমের স্ট্যাম্পিংয়ের শিকারে পরিণত করান এই অলরাউন্ডার।
সেকুগে প্রসন্ন আর চামারা কাপুগেদারা মিলে গড়েন ২১ রানের জুটি। এ দু’জনের জুটিটা ভাঙেন মাশরাফি। প্রসন্নকে বোল্ড করে। এরপর মালিঙ্গাকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজ। তার আগে কাপুগেদারাকে দারুণ এক স্লোয়ারে পরাস্ত করে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। ক্যাচ ধরেন মিরাজ। তার আগে কাপুগেদারা ৩৫ বলে করেন ৫০ রান। ১৮তম ওভারের শেষ বলে ভিকুম সঞ্জয়াকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচে পরিণত করেন সাইফউদ্দিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা এই নবীন পেসারের প্রথম উইকেট। এরপরই বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠে বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান তুলেছে। জয়ের জন্য লঙ্কানদের সামনে ১৭৭ রানের টার্গেট ছুড়ে দিয়েছে মাশরাফির দল। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা ভালোই ছিল। ওপেনিং জুটিতে আসে ৭১ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন সাকিব আল হাসান। ইমরুল কায়েস করেন ৩৬ রান।
আইএইচএস