আইন-আদালত

মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য তদন্ত সংস্থায়

তদন্ত সংস্থার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘বিতর্কিত’ ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বিষয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য সংবলিত খবরের কাগজ জমা দিয়েছেন সাংবাদিক সাগর লোহানী ও প্রবীর শিকদার।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে তারা এসব তথ্য জমা দেন।

বিয়ষটি নিশ্চিত করে সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম সানাউল হক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, দুটি অনলাইন ও একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনসহ ২৮ পৃষ্ঠার কাগজপত্রের ফরোয়ার্ডিং জমা দিয়েছেন তারা।

‘এ সময় তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খানও ছিলেন তার কার্যালয়ে। পরে তারা তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।’

Advertisement

তিনি বলেন, দুই সাংবাদিক যেসব নথিপত্র দিয়েছেন, এগুলো আগেই আমাদের কাছে ছিল। তারপরও যেহেতু স্বেচ্ছায় তথ্য দিতে এসেছেন তারা- তাই তাদের দেয়া পেপারগুলো গ্রহণ করেছি।

এসব নথি তদন্তের সহায়ক হবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে এম সানাউল হক মিয়া বলেন, মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। এখন এসব পেপার অনুসন্ধানে সহায়ক কিনা যাচাই-বাছাই করে বলা যাবে।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাগর লোহানী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে, সেগুলো তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছি। তারা গ্রহণ করেছেন। অনুসন্ধানে প্রমাণযোগ্য অপরাধ পাওয়া গেলে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে তদন্তের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে প্রবীর শিকদার বলেন, ‘আমরা আশা করছি তদন্ত সংস্থা শিগগিরই মুসা বিন শমসেরের মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তের উদ্যোগে নেবেন।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, তারা যেসব ডকুমেন্টস দিয়েছেন, আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। সত্যতা থাকলে অবশ্যই তদন্ত হবে।

ফরিদপুর শহরের সাধারণ একটি পরিবার থেকে রহস্যময়ভাবে ধনকুবের হয়ে ওঠা মুসাকে তার এলাকার মানুষ ‘নুলা মুসা’ নামেই চেনে। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর বিভিন্ন পর্যায় থেকে তার বিচারের দাবি ওঠে।

মুসার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানের কথা বললেও তাতে কোনো অগ্রগতির খবর দিতে পারছিল না ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

এর প্রেক্ষাপটে অভিযোগ ওঠে, প্রধানমন্ত্রীর ফুপাত ভাইয়ের বেয়াই হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন জাঁকজমকপূর্ণ চলাফেরার জন্য বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের প্রিন্স’ হিসেবে পরিচয় পাওয়া মুসা।

গত ২১ মার্চ মুসার বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ফরিদপুরের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুসার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী প্রমাণ দিতে তারা ‘তৈরি আছেন’।

মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একাত্তরে মুসা বিন শমসেরের অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগের খতিয়ানও সেখানে তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত ২৯ মার্চ তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক বলেছিলেন, অনুসন্ধানে ‘অগ্রগতি হলেই’ তারা মুসার বিরুদ্ধে মামলায় যাবেন। এ ব্যবসায়ীর বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা তদন্ত সংস্থাকে দিতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন তিনি।

ওই আহ্বানে সাড়া দিয়েই বৃহস্পতিবার নথি হস্তান্তরের কথা বলেন সাগর লোহানী ও প্রবীর শিকদার।

প্রবীর শিকদার বলেন, ‘১৬ বছর আগে আমি দৈনিক জনকণ্ঠে নুলা মুসার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করেছিলাম। সেই প্রতিবেদনের পর সে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করে। তবে আমি প্রাণে বেঁচে যাই। সে সময় সংবাদকর্মীরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’

‘আমি যা লিখেছি, তা যদি সত্যি না হত, তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারত। সে তা না করে আমার ওপর হামলা করেছে।’

এফএইচ/এমএমএ/জেএইচ/পিআর