ক্রিকেট খেলাটা সব সময় বাংলাদেশকে মুখর করে রাখে। ক্রিকেটকে ঘিরে দেশের মানুষের আবেগ, ভালোবাসা ও উন্মাদনা ক্রিকেট বিশ্বের অজানা নয়। শ্রেণি চরিত্রের বৈষম্যের বেড়া ভেঙে ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের গণমানুষের একটি প্রিয় খেলা হিসেবে পরিচিত হতে পেরেছে। ক্রিকেটের সার্বজনীন আবেদন মানুষকে সব সময় কল্যাণময়ী খেলাটির দিকে টানছে। ক্রিকেটকে আকরে ধরা, এই খেলার পিছনে ঐক্যবদ্ধ হবার অন্যতম কারণ হলো খেলাটির প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন ক্রিকেট একমাত্র দলীয় খেলা- যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাঙ্গালি জাতির পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব। ক্রিকেটই একমাত্র দলীয় খেলা যার মাধ্যমে বিজয়ের সান্নিধ্য ধারাবাহিকতার ( সব খেলাতে কখনো জেতা যাবে না) সঙ্গে এখন হয়তো মিলছে না, তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে দেখা মিলবে।আমরা লক্ষ্য করি ক্রিকেট খেলাটা আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনকে কীভাবে আলোড়িত করে ও প্রভাবিত করে। দেশের মানুষ ক্রিকেট উপভোগের জন্য উত্তাল হয়ে ওঠেন। ক্রিকেটকে ঘিরে পুরুষ ও নারী নির্মিশেষে সকলের সচেতনতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এটা ইতিবাচক লক্ষণ। সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ ক্রিকেট খেলাকে তাদের দিন-প্রতিদিনের কথাবার্তা ও আলোচনায় টেনে আনেন এভাবে অন্য কোনো দলীয় খেলাকে ঘিরে মেতে ওঠেন না। এর পেছনে যুক্তি ও সঙ্গত কারণ আছে। তবে সেই পর্যালোচনায় যাবো না।দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশ দল যখন মাঠে থাকেন তখন সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে খেলার দিকে। শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ক্রিকেটের আলোচনা বারবার ঢুকে পড়ে। আর একটাই প্রত্যাশা থাকে বাংলাদেশ ভালো খেলুক। এটা কিন্তু একটা দলের মাঠের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বড় শক্তি ও প্রেরণা।আমরা লক্ষ্য করেছি শত ব্যস্ততার মাঝে আমাদের সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ চলাকালীন এক পর্যায়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে ছুটে গিয়েছিলেন ক্রিকেট উপভোগ করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী খেলাপ্রেমিক, খেলাধুলা পছন্দ করেন কারণ অনেকে শুধু খেলা চর্চার পৃষ্ঠপোষকও। সুষ্ঠু ক্রীড়াচর্চার ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত আগ্রহ, সমর্থন, সহযোগিতার কারণ অজানা নয়। মিরপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা দেখতে যেয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে মাঠের ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করেছেন। দেশের সরকারপ্রধান মাঠে উপস্থিত হয়ে ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করার গুরুত্বই আলাদা।বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আসর নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। খেলা হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা কিংবা সিলেটে। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু আছে কিন্তু সেখানে গত কয়েক বছর ধরে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। যেখানেই খেলা হচ্ছে সেখানেই খেলা দেখার জন্য কী প্রচণ্ড আগ্রহ। ক্রিকেট উৎসাহী পুরুষ ও নারীদের হাপিত্যেস। প্রতিটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুর দর্শক ধারণ করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধতা আছে। ইচ্ছে করলেই টিকিট ছাড়া সম্ভব নয়। মাঠ ছাড়াও টেলিভিশনের `লাইফ` টেলিকাস্ট দেখার সুযোগ আছে। সুযোগ আছে বেতারে খেলার ধারাবিবরণী শোনার। তারপরও ক্রিকেট রসিকরা চান, চাচ্ছেন মাঠে উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করার। মাঠে বসে খেলা দেখার মজাটাই তো আলাদা। দেশের ক্রিকেটের হোম মিরপুর স্টেডিয়াম মাত্র ২৪০০০ হাজার পুরুষ ও নারী দর্শখদের খেলা দেখার সুযোগ আছে, অথচ খেলা দেখতে আগ্রহী এর তিনগুন বেশি। এই সমস্যর সমাধান কীভাবে সম্ভব?রাজধানীতে আরেকটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বাচলে রাজউজের প্রকল্প এলাকায় ৭০ হাজার আসনের এ স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কক্সবাজারের ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে এক লাখ আসনের। গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, “আগের দিন স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলায় দেশের খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধন্যবাদ দেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। জবাবে প্রধানমন্ত্রী পূর্বাচলে স্টেডিয়াম করার ঘোষণা দেন। ওই সময় কয়েকজন মন্ত্রী পূর্বাচলে স্টেডিয়াম না করে মিরপুর স্টেডিয়ামকে আধুনিক করার পরামর্শ দেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্বাচল প্রকল্প এলাকায় স্টেডিয়ামের জায়গা রাখা হয়েছে। সেখানে বাসের পাশাপাশি ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে”। সূত্র : নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের কণ্ঠ, ২১ এপ্রিল, ২০১৫।আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসকে সাধুবাদ জানাই। আধুনিক বড় স্টেডিয়াম নির্মিত হলে একসঙ্গে ৭০ হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করতে পারবেন মাঠে বসে। মাঠে যেয়ে খেলা দেখার আগ্রহ অনেকেরই পূরণ হবে।যেহেতু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটা অবস্থানে পৌঁছে গেছে এতে করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের স্বাগতিক দেশ হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে করে নতুন বড় আধুনিক স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু যত বেশি বাড়বে এটাতো আমাদের জন্য সম্মানজনক। নতুনে স্টেডিয়াম নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই সবকিছু ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ ও চিন্তাভাবনা করে কাজে হাত দেয়া হবে। এতে করে পরবর্তী সময়ে বারবার বিভন্ন ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে না। লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক।এমআর/আরআইপি
Advertisement