পাঠ্যপুস্তক কেলেঙ্কারির দায়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ঊর্ধ্বতন ছয় কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ক্রটির কারণ সনাক্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রূহী রহমান বুধবার জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে সব বিষয় নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাতজনকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রথমে স্ব-কর্মস্থল থেকে বদলি ও পরে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এনসিটিবির প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ইউংয়ের সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নানকে ঝিনাইদহের সরকারি কে সি কলেজে, সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক গৌরাঙ্গ লাল সরকারকে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজে, এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক মো. মোসলে উদ্দিন সরকারকে পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ ও মো. হান্নান মিঞাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সরকারি কলেজে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, এ চার কর্মকর্তাকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল ত্যাগ করতে হবে। তা না করলে আজ (বুধবার) বিকেলেই তারা ‘তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত’বলে গন্য হবেন।
Advertisement
এর আগে মঙ্গলবার রাতে অপর এক আদেশে এনসিটিবির সচিব মো. ইমরুল হাসানকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সরকারি কলেজে, এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা লিপিকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে বদলি করা হয়েছে।
ইমরুলকে বুধবারের মধ্যেই বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হতে বলা হয়েছে। তার জায়গায় এনসিটিবির সচিব হিসেবে আসছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. নিজামুল করিম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালাল বলেন, পাঠ্যপুস্তকে ভুলের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এই কর্মকর্তাকে দায়ী করেছিল। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশে এখন বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, পাঠ্যবইয়ে ভুলভ্রান্তি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রূহী রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া এনসিটিবিও একটি তদন্ত কমিটি করেছিল।
Advertisement
এনসিটিবির তদন্ত কমিটির প্রাথমিক সুপারিশের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করা হয়েছে। আর এনসিটিবির আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদীনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেখেছে মন্ত্রণালয়।
পাঠ্যবইয়ে ভুলের ঘটনায় এখন পর্যন্ত এনসিটির ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল সরকার। তবে ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংশোধনী পাঠানো হয়নি।
এবার বছরের প্রথম দিন ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ শিক্ষার্থীর হাতে এবার ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।
নতুন পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে ফেইসবুকে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে পাঠ্যবই পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে এনসিটিবি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দায়ীদের চিহ্নিতে কমিটি করে।
জেএইচ/এএইচ/জেআইএম