স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান, দেশের আকাশসীমা মুক্ত রাখা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের প্রয়োজনে জনসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে আজকের আয়োজন-
Advertisement
‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’- এ মূলমন্ত্রে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আকাশসীমা রক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে সর্বদা নিয়োজিত। এ বাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে ও মাতৃভূমির ডাকে সাড়া দিয়ে বিমান বাহিনীর যে সব বাঙালি কর্মকর্তা ও বিমানসেনা পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ করেছিলেন তাঁরা বাংলাদেশ ফোর্সেসের বিভিন্ন সেক্টর ও ব্রিগেডের সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। মাত্র ৯ জন বৈমানিক ও ৩৮ জন বিমানসেনা এবং অত্যন্ত অপর্যাপ্ত সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে একাত্তরের ২৮ সেপ্টেম্বর ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাত্রা শুরু করে।
অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে এ বাহিনী ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বমোট ৫০টি অপারেশন পরিচালনা করে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের গোদানাইল তেল-ডিপো ধ্বংস, মৌলভীবাজারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১৩ ব্রিগেড সদর দফতর আক্রমণ; সমশেরনগর ও কুলাউড়ায় বিমান আক্রমণ; দাউদকান্দিতে পাকিস্তান সৈন্যদের ওপর আক্রমণ; নরসিংদীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলা-বারুদ বহনকারী ট্রাকে আক্রমণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরে তেলবাহী জাহাজ ধ্বংস ও রিফাইনারি আক্রমণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
Advertisement
এ বাহিনীর প্রায় ১ হাজার ১৩১ জন সদস্য প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখসমরে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য এ বাহিনীর শহিদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে এবং ৬ জন বীর উত্তম, ১ জন বীর বিক্রম ও ১৫ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
তাঁদের অবদান সমগ্র জাতি তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সফলতা বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের অাকাশসীমা সুরক্ষার পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ ও চিকিৎসা-সেবায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তন্মধ্যে ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের ভয়াবহ বন্যা, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যগণ ১৯৯৩ সাল থেকে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, মায়ানমার, চীন, জাপান ইত্যাদি দেশসমূহে সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিমান বাহিনী দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চারটি ঘাঁটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান ও সাফল্য অর্জনের জন্য ২০০৩, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড পদক লাভ করে।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম