খেলাধুলা

কে হচ্ছেন বাংলাদেশের পরবর্তী অধিনায়ক!

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের পরই ভেতরে ভেতরে আলোচনা তৈরি হয়েছিল। টি-টোয়েন্টিতে নতুন রক্তের সঞ্চার করা প্রয়োজন- এই তত্ত্ব নিয়ে বিসিবির ভেতরে এবং বাইরে আলোচনা ছিল বেশ সরব। তবে খুব দ্রুতই পরিবর্তন আসতে পারে, এমনটা ভাবেনি কেউ। শ্রীলঙ্কা সিরিজে তাই কোনো পরিবর্তনের আভাষই মেলেনি।

Advertisement

তবে, সফর শেষ হতে না হতেই সেই পরিবর্তন। শুধু পরিবর্তনই নয়, বড় ধরনের ধাক্কাই খেয়ে গেলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি মাঠে গড়ানোর আগেই এই ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

অবসর ঘোষণা দিতে গিয়ে মাশরাফি জানিয়েছেন, নতুন নতুন প্রতিভা উঠে আসছে। তাদেরকে সুযোগ করে দিতেই এ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। যদিও, কলম্বোয় আজ সারাদিনই গুঞ্জন ভাসছিল, মাশরাফির অবসর নিয়ে। সন্ধ্যা পৌনে সতাটায় নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে অবসরের ঘোষণা দেয়ার পরও টস করার সময় ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্স মাশরাফিকে জিজ্ঞাসা করে বসলেন এ বিষয়ে।

তখনই মাশরাফি জানান, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজটাই হচ্ছে আমার ক্যারিয়ারের শেষ। আমি আমার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, ভক্ত এবং বিসিবি কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, আমাকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দেয়ার জন্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটে উঠে আসছে নতুন নতুন প্রতিভা। তাদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য এখনই সেরা সময় অবসর নেয়ার।’

Advertisement

টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফির অবসরের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে গেছে, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পরবর্তী অধিনায়ক হচ্ছেন কে? ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মাশরাফি ২৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ সময় জয়ও পেয়েছে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি, মোট ৯টি। তার নেতৃত্বেই গত এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের মত দলকে হারিয়ে খেলেছিল ফাইনাল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ তিন বলের নাটক না হলে ভারতের বিপক্ষেও জিতে যেতে পারতো বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত হেরেছিল ১ রানে।

এমন এক নেতার জায়গা পূরণের জন্য এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে বেশি যোগ্য কে? মুশফিকুর রহীম টেস্ট দলের অধিনায়ক। মাশরাফির আগে ছিলেন ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি দলেরও অধিনায়ক। টেস্ট নেতৃত্বের পাশাপাশি তার কাঁধে টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব তুলে দেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

মুশফিকছাড়া দলে সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) চিটাগাং ভাইকিংসের অধিনায়ক হিসেবে দারুণ ব্যর্থ তামিম ইকবাল। সুতরাং, জাতীয় দলে টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব তামিমের ঘাড়ে দেয়া হবে না এটা মোটামুটি বলা যায়।

বাকি থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর সাকিব আল হাসান। বিপিএলের গত আসরে বরিশাল বুলসকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যদিও মাশরাফির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হেরে শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। তবে তার অসাধারণ নেতৃত্ব সবারই প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সর্বশেষ বিপিএলেও খুলনা টাইটান্সকেও অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রিয়াদ। তার নেতৃত্বে খুলনা টাইটান্স খেলেছিল প্লে-অফ পর্ব। এবারও তিনি নেতা হিসেবে বিপিএলে দারুণ প্রশংসিত হন এবং ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সের পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার।

Advertisement

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় দাবিদার সাকিব আল হাসান। বিপিএলে এবার ঢাকা ডায়নামাইটসকে নেতত্ব দিয়ে শিরোপা জিতিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পোস্টারবয় তিনি। আইপিএল, পিএসএল, সিপিএল থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগ- সব জায়গাতেই সরব উপস্থিতি সাকিবের। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ তাকেই বলা যায়। আবার জাতীয় দলে মাশরাফির ডেপুটিও তিনি। সুতরাং, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব সাকিবের ঘাড়েই আসছে, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোও জানিয়েছে, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পরবর্তী অধিনায়ক হবেন সম্ভবত সাকিব আল হাসানই। নিউজিল্যান্ডে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর বিসিবিতে সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করে টি-টোয়েন্টি দল ঢেলে সাজানোর ব্যপারে আলোচনাও চলছিল। এরপর থেকেই অবশ্য ক্রিকেটপাড়ায় চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, সাকিব আল হাসান আবারও নেতৃত্বে ফিরে আসছেন। শেষ পর্যন্ত তেমনটি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আইএইচএস/এমএস