২০১৪ সাল। বাংলাদেশের দলের তখন হতশ্রী অবস্থা। একের পর এক ম্যাচ হেরে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নিয়ে চলছে সমালোচনার তুমুল ঝড়। ভারতের তৃতীয় সারির দলের কাছে একের পর এক পরাজয়। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোনো প্রতিরোধই গড়তে না পারা কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে হেরে আসা। সবচেয়ে বড় কথা, এশিয়া কাপে দুর্বল আফগানিস্তানের কাছেও হেরে পুরোপুরি কোণঠাসা টাইগাররা। এমনই এক সময়ে বিশৃঙ্খল একটি দলের ভার তুলে দেয়া হলো মাশরাফি বিন মর্তুজার কাঁধে। এরপর বাকিটা ইতিহাস। দিনটি ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সাল।
Advertisement
দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই পেলেন জিম্বাবুয়েকে। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে হারের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ঘরের মাঠে অতিথি হয়ে এলো জিম্বাবুয়ে। এলটন চিগুম্বুরার দলের কাছেও তখন হারের শঙ্কায় টাইগাররা। তবে নতুন নেতৃত্বে আশা মাশরাফির কারণেই খানিটকা আশা জাগছিল টাইগার ভক্তদের হৃদয়ে। মাশরাফিও দু’হাত ভরে দিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয়। মাশরাফির নেতৃত্বে হোয়াইটওয়াশ দিয়েই শুরু হয় নতুন বাংলাদেশের। এরপর বিশ্বকাপে নজরকাড়া সাফল্য। প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ। শক্তিশালী ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। মাশরাফির নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশেরই যেন অভ্যুদয় ঘটে।
শুধু ওয়ানডেতেই নয়, টি-টোয়েন্টিতেও দারুণ উন্নতি করে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় টাইগাররা। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তিন বলের নাটক না হলে হয়তো রূপকথাই লেখা হয়ে যেতো। তবুও ১ রানের ওই হারে ছিল গৌরব।
Advertisement
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুটি দলেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি। টানা প্রায় আড়াই বছর দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর এবার টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেন তিনি। প্রথমে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অবসরের ঘোষণা দেন। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস করার সময়ও অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দেন তিনি।
মঙ্গলবারের ম্যাচ দিয়ে রেকর্ড ২৭ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিলেন মাশরাফি। দল সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি জিতেছে তার নেতৃত্বেই। এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয় ৯টি।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন মাশরাফি। সেই থেকে এই ম্যাচ পর্যন্ত খেলেছেন বাংলাদেশের ৬৬ টি-টোয়েন্টির ৫৩টিতেই। নিয়েছেন দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ উইকেট। মাশরাফির সেরা বোলিং ফিগার ১৯ রানে ৪ উইকেট। এছাড়াও ব্যাট হাতে রান করেছেন ৩৬৮।
আরটি/আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement