দেশজুড়ে

নওগাঁয় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে

নওগাঁ এক সময় গাঁজা চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালে জেনেভা কনভেনশনে বাংলাদেশ সরকার গাঁজা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বন্ধ রাখার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফলে ১৯৮৭ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় নওগাঁর গাঁজা চাষ। এতে গাঁজাচাষী পরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ে। এরপর বেকার ও কর্মহীন কৃষক সেই জমিগুলোতে শুরু করে সবজি চাষ । বর্তমানে সবজি চাষের পাশাপাশি বেড়েছে পান চাষে আগ্রহ । নওগাঁ সদরের বর্ষাইল ইউনিয়নে প্রায় ১২টি গ্রামে ৩০০টিরও বেশি পানের বরজ রয়েছে। বর্তমানে এলাকার কৃষকরা আধুনিক বা শেডনেট পদ্ধতিতে পানের আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন। এ পদ্ধতিতে পানের ফলন ও গুণমান ভালো হয়। তাছাড়া এ এলাকার এঁটেল মাটিতে পান মিষ্টি ও সুস্বাদু বলে বাজারে চাহিদা বেড়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানকার পান কেনেন।চাষীরা জানান, আগে বরজে শুধু সরিষা খইল ব্যবহার করায় গাছের বৃদ্ধি হতো কম। বেশির ভাগ সময় উৎপাদন খরচই উঠত না। বিভিন্ন রোগের সংক্রমণে মরে যেত অধিকাংশ পানগাছ। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে কম জমিতে বেশি পান উৎপাদন হচ্ছে। এমনকি বাজারে চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।বেলাল হোসেন ও জালাল হোসেন নামের দুই জন পান চাষী বলেন, বরজ তৈরিতে ব্যবহৃত বাঁশ, খড়, তার ও মজুরিসহ প্রথম অবস্থায় প্রতি বিঘা জমিতে পান চাষে ব্যয় হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তারা একটি বরজে ১১শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছেন। এবার তাদের বরজে পানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। বরজে বিভিন্ন ধরনের জৈব সার ও খইলের পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন কীটনাশক। এতে পানের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে পানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।পান চাষী মামুন উর রশীদ বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পান চাষ করে বছরে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। একই বরজ থেকে প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত পান সংগ্রহ করা যায়। ফলে সংসার খরচ ছাড়াও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হয়। জাগেশ্বর গ্রামের শ্রী সমল চন্দ্র মন্ডল জানান, গত সাত বছর থেকে তিনি পান চাষ করছেন। এবার এক বিঘা জমিতে পান চাষ করেছেন। পানের বরজে পোকার আক্রমণসহ পাতা হলদে ভাব ও পাতা মরা দেখা দিয়েছে। এতে লোকশানের মধ্যে পড়তে হবে।এদিকে পান চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয় কৃষকদের। পানের বিভিন্ন রোগ-বালাই নিরসনের জন্য কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতা নেই বলে অভিযোগ করেন অনেক চাষী। নওগাঁ জেলা কৃষি কর্মকর্তা সত্যব্রত সাহা জানান, ভালো দাম পাওয়ায় জেলায় প্রায় এক হাজারটিরও বেশি পানের বরজে পান চাষ করছে পান চাষী। পান চাষের রোগ বালাই, পাকামাকড়ের আক্রমণ ও পচন থেকে রক্ষার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয় বলে জানান তিনি। এসএস/এআরএস/পিআর

Advertisement