খেলাধুলা

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবার মাশরাফিদের টি-টোয়েন্টি মিশন

টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ কবে জিতেছে বাংলাদেশ? এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ডি/এল মেথডে ৫৪ রানে সর্বশেষ জয় পেয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজারা। এরপর আর কোনো জয়ের দেখা নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরই সুপার টেন পর্বে চার ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের কাছে ১ রানে একটি ম্যাচে হেরেছিল। যেখানে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কপালে পরাজয় লেখা হলো। এছাড়া পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।

Advertisement

বাংলাদেশ অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আর এই ফরম্যাটের ম্যাচ নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে খেলারই সুযোগ পায়নি। ২০১৬ সালের শুরুতে এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি ছাড়া বছরের অর্ধেকের বেশি সময়ই তো বলতে গেলে না খেলে কাটাতে হয়েছে টাইগারদের। মাঝে অক্টোবরে ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফরে এলেও সেখানে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল না।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই ফরম্যাটের ম্যাচ খেলার জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে নিউজিল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত। এই ফরম্যাটে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কিউইদের বিপক্ষে মাশরাফিরা খেলেছে এ বছর জানুয়ারিতে। যদিও স্বাভাবিকভাবেই স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই পরাজয় বাংলাদেশের।

সব মিলিয়ে টানা সাতটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। এই জয় খরা কাটানোর দারুণ সুযোগ মাশরাফিদের সামনে। টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ ড্র করার পর স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুরোপুরি ফ্লাড লাইটের আলোয় শুরু হবে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি।

Advertisement

যে কোনো দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থাকে সবচেয়ে গুরুত্বহীন। তারওপর এই ম্যাচগুলো যদি হয় একেবারের সফরের শেষ প্রান্তে, তাহলে তো কথাই নেই। এই সিরিজের গুরুত্ব থাকে খুবই কম। সাইড বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষাই মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটির জন্য।

কিন্তু শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে টি-টোয়েন্টি কিন্তু বেশ গুরুত্ব নিয়েই হাজির হয়েছে। এর একমাত্র কারণ আগের টেস্ট এবং ওয়ানডে- এই দুটি সিরিজ ড্র হওয়া। এখন এই একটি সিরিজই বাকি আছে, যেখানে কোন এক দল এককভাবে ট্রফি জিততে পারে।

নিশ্চিতভাবেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাই ফেভারিট। কারণ, তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। শ্রীলঙ্কা দলটি খুবই তরুণ; কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরা। কারণ, মাত্র কিছুদিন আগেই অ্যাওয়েতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতে এসেছে তারা। ঘরের মাঠে তো আরও শক্তিশালী হবেই তারা। শুধু তাই নয়, বৈচিত্র্যময় পেসার লাসিথ মালিঙ্গা ফিরেছেন লঙ্কান দলে।

তবে লঙ্কানদের টপ অর্ডার সাজাতে গিয়ে পড়তে হবে মধুর সমস্যায়। তাদের হাতে রয়েছে চারজন ওপেনার। এখান থেকে বেছে নিতে হবে দু’জনকে। অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গার সঙ্গে রয়েছেন দানুশকা গুনাথিলাকা, দিলশান মুনাভিরা এবং হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি থেকে ফেরা কুশল পেরেরা। এছাড়া কুশল মেন্ডিস, অ্যাশেলা গুনারত্নে থেকে শুরু করে থিসারা পেরেরা- শ্রীলঙ্কা দলটিকে টি-টোয়েন্টিতে করে তুলেছে দারুণ শক্তিশালি।

Advertisement

দীর্ঘদিন জয় না পাওয়া বাংলাদেশও কিন্তু নিজেদেরকে ইতিমধ্যেই বড় হুমকি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের কোনটিতে জয় না পেলেও উপমহাদেশের কন্ডিশনে বাংলাদেশও বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং লাইনআপে খুব একটা পার্থক্য নেই। যে কারণে, দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে একধরনের ভারসাম্য চলে এসেছে এবং স্থান হারানো নিয়েও কোনো শঙ্কা নেই। তামিম-সৌম্য ইনিংসের ওপেন করবেন। সাব্বির রহমানের তো সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাটই হলো টি-টোয়েন্টি। মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ কিংবা মোসাদ্দেকরা যে কোনো বোলিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন।

বোলিংয়েও শ্রীলঙ্কাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত ভালো অস্ত্র রয়েছে তাদের হাতে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং পেসার তাসকিন আহমেদ রয়েছে দারুণ ছন্দে। ওয়ানডে সিরিজে নিয়মিত উইকেট নিয়েছেন এই দুই বোলার। সঙ্গে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের অভিষেক হয়ে যেতে পারে এই ম্যাচে। অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তো আছেনই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও টি-টোয়েন্টিতে বেশ ভালো বল করেন, সম্প্রতি সেটা প্রমাণ করেছেন।

সুতরাং, টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজের মত টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে, এটা চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায়। এখন দেখার বিষয়, সাত ম্যাচ ধরে বাংলাদেশের যে জয়খরা চলছে, সেটা কাটাতে পারেন কি না মাশরাফিরা।

আইএইচএস/পিআর