দেশজুড়ে

পাহাড়ি ঢলে দিশেহারা হাওরাঞ্চলের ৮ হাজার কৃষক

পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের চর হাইজদা বেড়ি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের বোরো ফসল। ডুবে গেছে হাওরে আবাদকৃত ২৫ থেকে ৩০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। বছরের একমাত্র ফসল হারিয়েছে হাওরাঞ্চলের ৮ হাজার কৃষক। এদিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া কাঁচা ধানই কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে, সময়মতো সঠিকভাবে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ না হওয়ায় এ দুর্যোগের কবলে পড়েছে হাজার হাজার কৃষক। নেত্রকোনার ১০টি উপজেলার কৃষকেই এই আগাম বন্যার কবলে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, চর হাইজদা বাঁধের গাগলাজুর পয়েন্টের জালালের দুয়ার, জৈনপুর স্লুইচ গেট বেগুনবাড়ি বাঁধ রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। জনরোষের ভয়ে স্থানীয় পাউবো ও বাঁধ নির্মাণ কাজের ঠিকাদাররা বাঁধ এলাকায় নেই বলেও জানান স্থানীয়রা।

জেলার মোহনগঞ্জের শতাধিক গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় সেখানে মাটি ভরাট করছেন।

Advertisement

স্থানীয় কৃষকরা জানান, চর হাইজদা বেড়ি বাঁধে মাটি ভরাট ও উঁচুকরণ কাজে গাফিলতি করায় এ অবস্থা হয়েছে। বাঁধের অনেক স্থানেই মাটি ভরাট ও উঁচুকরণ হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবার ওই বাঁধ মেরামত, মাটি ভরাট ও উঁচুকরণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা এবং টেন্ডারের মাধ্যমে ২ গ্রুপে ১ কোটি ৫১ লাখ বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার কাজ পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স ও ৩৫ লাখ টাকার কাজ পায় ময়মনসিংহের শামিম এন্টারপ্রাইজ।

দুটি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাওয়ার দেড় মাস পর গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। কাজে গাফিলতির কারণে গত বছরের মতো এবারও আগাম বন্যায় ফসলহানি হয়েছে হাওর পাড়ে ৪ ইউনিয়নে ৬১ গ্রামের কৃষকের। আশির দশকে মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপুতা হাওরের ফসল রক্ষার জন্য পাউবো ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ চর হাইজদা বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করে। তেঁতুলিয়া, মাঘান-সিয়াধার, সুয়াইর এবং গাগলাজুর ইউনিয়নের ৬১ গ্রামের ৮ হাজার কৃষকের বছরের একমাত্র ফসল চর হাইজদা বেড়ি বাঁধের ওপর নির্ভরশীল। এদিকে বারহাট্টায় গত কয়েক দিনের আগাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।চোখের সামনে আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার হাওড় পাড়ের কৃষকদের মাঝে কান্নার রোল পড়েছে। দিন-রাত বাঁধের উপর মাটি ফেলেও রক্ষা করতে পারছেনা। উপজেলার ছোট-বড় নদীগুলো দিয়ে প্রবলবেগে পানি হাওড় বিলে প্রবেশ করেছে। মাঠের পর মাঠ কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

খাসিকোণা গ্রামের হারেছ শেখ জাগো নিউজকে জানান, তার ২০ কাঠা জমিতে ধানের ফসল ছিল। খড়মা নদীর পানিতে সবটাই তলিয়ে গেছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে তার না খেয়ে থাকতে হবে।

Advertisement

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ জাগো নিউজকে জানান, এ বছর ১৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। ফসলও ভালো হয়েছিল।বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির ফসলই পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিরাম ইউনিয়নের চেংজান হাওড়, সিংগুয়ার হাওড়, খইকুড়িবিল, গুংগিয়াজুরী। সিংধা ইউনিয়নের সূচীয়ার হাওড়, ইরার বিল, আশিওল বিল, বানিয়ারগাও বিল। আসমা ইউনিয়নের জলদিঘা, কলাভাঙ্গা হাওড়, পাবিয়ার বিল, চিনাচাপরা ও রৌহা বিল। বারহাট্টা সদর ইউনিয়নের চাকুয়ার বিল, মাকড়া বিল ও বারহুমড়া বিল।

চিরাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মঞ্জুরুল হক জাগো নিউজকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক সময়ে বাঁধ গুলো মেরামত না করায় আগাম বর্ষণের ফলে এলাকার কৃষকরা আজ তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। খালিয়াজুরি হাওররক্ষা কমিটির সভাপতি কাজল চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, সঠিকভাবে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করে কোটি কোটি টাকা যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের বিচার করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে রক্ষা না করলে এলাকায় মঙ্গা নেমে আসবে।

নেত্রকোনার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জাগো নিউজকে জানান, বাঁধের কাজ সময়মতো হয়েছে। তবে অতিরিক্ত পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

কামাল হোসাইন/এমএএস/পিআর