‘এই আপুর প্রতি ইন্টারেস্ট আছে নাকি? সর্বশেষ কবে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছ? ১০ জন পর্নোস্টারের নাম বলো’- এমন আরও অনেক ‘কুরুচিপূর্ণ’ প্রশ্ন!
Advertisement
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ফিল্ম সোসাইটির ২০১৭-১৮ সেশনে নতুন সদস্য নেয়ার সময় সাক্ষাৎকারের প্রশ্নের ধরন ছিল এমনই। হঠাৎ করে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ায় বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন সংগঠনটির সদস্য হতে আগ্রহী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
চলচ্চিত্র সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন না করে নানা ধরনের অবান্তর ও অশ্লীল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করায় ক্ষুব্ধ তারা। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকে।
কেউ কেউ আবার সদস্য হওয়ার সুযোগ পেলেও এ সংগঠনে না জড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
Advertisement
তবে এ বিষয়ে ফিল্ম সোসাইটি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন সদস্যদের ম্যাচুরিটি পরখ করতে এসব প্রশ্ন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথ হলের এক ছাত্র জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফিল্ম সোসাইটির প্রতি বরাবরই আমি দুর্বল। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সংগঠনটির সদস্য হওয়ার জন্য ভাইভায় অংশ নেই।’
‘কিন্তু সেখানে আমাকে বলা হয়, সর্বশেষ কবে যৌন মিলন করেছি! মাস্টারবেশনের সময় কাকে কল্পনা করেছি! জানতে চাওয়া হয় ১০ জন পর্নো স্টারের নাম। কোনো ধরনের ফিল্ম রিলেটেড প্রশ্ন করা হয়নি।’
আর মুহসীন হলের ছাত্র এবং ফিল্ম সোসাইটির সদস্য হতে আগ্রহী নাঈম (ডাকনাম) বলেন, ‘ভাইভা বোর্ডে বসা একজন নারী সদস্যকে দেখিয়ে অন্য একজন প্রশ্ন করেন, আপুকে...ইন্টারেস্ট আছে নাকি? এমনকি বোর্ডে বসা ওই নারী সদস্য প্রশ্ন ছোড়েন, সর্বশেষ কবে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছ? ফিলিংস কী?’
Advertisement
‘ম্যাচিউরিটি টেস্টের জন্য আরও অনেক প্রশ্ন হতে পারে, কিন্তু এ ধরনের প্রশ্নে আমি বিব্রত এবং ক্ষুব্ধ। তাই সুযোগ পেলেও ওই সংগঠনে কাজ করব না’- যোগ করেন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক প্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমন প্রশ্নে আমি অবাক হয়েছি। ধারণাই ছিল না আমার যে, ঢাবির কোনো সংগঠনের ভাইভার প্রশ্ন এমন হতে পারে।’
‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়, সিগারেট টানতে পারব কিনা? বাথরুম পরিষ্কার ও পানি টানতে পারব কিনা? ফিল্ম সোসাইটিতে কি আমি সিগারেট টানতে আর বাথরুম পরিষ্কার করতে যাব’- প্রশ্ন রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের এ ছাত্র।
এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি বেশ ‘গর্বের’ সঙ্গে স্বীকার করেন ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন তাহা। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘এসব প্রশ্ন নতুন সদস্য রিক্রুটের সময় করা হয়। আমরা ম্যাচিউরিটি পরীক্ষার জন্য এ ধরনের প্রশ্ন করে তাদের বিব্রত করি। কারণ তাদের মেন্টালিটি জানা আবশ্যক। কারণ প্রায় ১২শ’ শিক্ষার্থী থেকে আমরা মাত্র ৩০ জনকে নেব।’
ফিল্ম সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন করা হয় না কেন- এমন প্রশ্নে জবাবে তাহা বলেন, ‘আমরা তাদের ফিল্ম শিখিয়ে নিতে পারব। কিন্তু এসব বিষয় তো শেখাতে পারব না। তাই বিভিন্ন প্রশ্ন করে যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খেতে পারবে কিনা তা যাচাই করি। কারো এলার্জি থাকলে সে নাও আসতে পারে।’
‘সিগারেট টানা, পানি টানা এবং বাথরুম পরিষ্কার’- এসব বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সংগঠনের সঙ্গে থাকতে হলে এসব কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ সিনিয়রদের সিগারেট টানা জুনিয়রদের কাজ। এটাই নিয়ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসহ সব জায়গায় এ সিস্টেম চালু আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলে কোনো উত্তর দিতে চাননি ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি এস এম আরিফ রায়হান শোভন। তিনি বলেন, ‘মোবাইলে কিছু বলতে চাই না। দেখা হলে সরাসরি বলব।’
তবে অভিযোগকারীরা অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে ‘দু-একটা’ নিয়ে অভিযোগ করেছেন- দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে ফিল্ম সোসাইটির উপদেষ্টা ও ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে জাগো নিউজের পক্ষে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকও এভাবে কথা বলেছেন। এভাবে চলতে পারে না। এমন কিছু করার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
উল্লেখ্য, সোমবার জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে বলা হয়, ‘চলচ্চিত্রে সরাসরি ধর্ষণের দৃশ্য দেখানো যাবে না। এমনকি অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষাও পরিহার করতে হবে।’ এছাড়া নীতিমালা অনুসারে শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্যমূলক আচরণ ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বুদ্ধ করে এমন দৃশ্য বা ঘটনা চলচ্চিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না।
এমএইচ/এমএমএ/এমএআর/পিআর