বিশেষ প্রতিবেদন

বেকার হচ্ছেন ২৫ হাজার শ্রমিক

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিশিল্প সাভারে স্থানান্তর হলে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রমিক সংগঠন ও ট্যানারি মালিকরা।

Advertisement

তারা বলছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। ফলে এখানে কর্মরত শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে সাভারে যেতে হবে। কিন্তু সাভারে এখনও পুরোপুরি কারখানার কাজ শেষ হয়নি।

এছাড়া শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় আছে যেগুলো কবে নাগাদ শেষ হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। এরপরও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মালিকপক্ষ সাভারে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য তারা প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু অনেক শ্রমিক সেখানে যেতে আগ্রহী নন। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা সেখানে কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, সন্তানদের কোথায় পড়াশোনা করাবেন- এসব চিন্তায় দিশেহারা সাধারণ শ্রমিকরা।

অন্যদিকে অনেক মালিক তাদের কারখানা ছোট করার পরিকল্পনা করছেন। ফলে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, কতো হাজার শ্রমিক বেকার হবেন তা বলব না। তবে এ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। আর পরোক্ষভাবে হাজারীবাগে দুই লাখ এবং সারা দেশে ৫০ লাখ মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। হাজারীবাগে সরাসরি জড়িত ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৫০ শতাংশই বেকার হয়ে পড়বে।

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সাভারে এখনও কাজের পরিবেশ তৈরি হয়নি। শ্রমিকদের বসবাসের স্থান এবং সন্তানদের পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মানবীয় বিষয়গুলোর কোনো সুব্যবস্থা নেই। যে কারণে অনেক শ্রমিক সাভারে যাবেন না। শ্রমিকরা যেতে চাইলেও কারও পরিবারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে সাভারে এখনও কারখানা পুরোপুরি চালু না হওয়ায় শ্রমিকদের কাজ দিতে পারবেন না অনেক মালিক। ফলে অনেক মালিক সাভারে স্থানান্তর করে কারখানা ছোট করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, দেশের রফতানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ শিল্প ট্যানারি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। যেমন ষড়যন্ত্র হয়েছে পাটকল নিয়ে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বিশ্বব্যাংক অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের পাটকল বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে ভারতকে অর্থ দিয়ে তাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলো সচল করে দেয়। একই ভাবে চামড়াশিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে। কোনোভাবে উৎপাদন কমে গেলে আমরা বায়ার (ক্রেতা) হারাব। সময় মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে বিদেশি ক্রেতা আসবে না। তারা তখন অন্য দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর আমাদের এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

Advertisement

এ চক্রান্ত অব্যাহত থাকলে ভারত ও পাকিস্তান সুবিধা পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

হাজারীবাগে রোববার রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কর্মহীন অবস্থায় বসে আছেন অনেক শ্রমিক। অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। মালিকরা কারখানা বন্ধ রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারখানার জিনিসপত্র স্থানান্তরের কাজ চলছে। কিন্তু শ্রমিকরা এখনও হাজারীবাগে আছেন। কিছু শ্রমিক সাভারে গেলেও খণ্ডকালীন সময়ের জন্য তারা যাচ্ছেন। কেউ কেউ সকালে গিয়ে বিকেলে চলে আসেন।

হাজারীবাগ ট্যানারি মোড়ে নিজেদের ঠেলাগাড়ির ওপর বসে অলস সময় পার করছিলেন ‘হাজারীবাগ ঠেলাগাড়ি বহুমুখী সমবায় সমিতি’র সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, মিরাজ, বাবুল, বারেকসহ অনেকেই। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে। জানতে চাইলে তারা বলেন, ঠেলাগাড়ি সমিতির ১১০০ সদস্য রয়েছে।

এছাড়া আরও অন্তত ১২টি সংগঠনের ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে পেশা ছেড়ে দিয়েছে। কারণ তাদের পরিবারের সদস্যরা সাভারে যেতে চান না। সেখানে গেলেও কোথায় থাকবে, কী করবে, সন্তানরা কোথায় পড়াশোনা করবে- এসব বিষয় ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে ঠেলাগাড়ির সঙ্গে জড়িত। পরিবার-পরিজন নিয়ে মোটামুটি চলে। বাবা-মা বলেছেন বাড়ি চলে আসতে। সাভারে কীভাবে যাব! সেখানে আমাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। বাড়িতে গেলে একটু কষ্ট হবে। এরপরও সুখে থাকতে পারব।’

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, হাজারীবাগের অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ। যে কয়টি খোলা আছে তা ৬ এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কোথায় যাবেন, কী করবেন- তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। হতাশায় ভুগছেন শ্রমিক নেতারাও। তাদের অসহায় অবস্থার কথা চিন্তা করে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তারা।

এমএসএস/এমএআর/এমএস