বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-
Advertisement
ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে কিশোরগঞ্জ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৪১ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ১৯৪৩ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনে তিনি ১৯৪৬ সালে পুলিশ বিভাগে সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন। চাকরিজীবনে বিভিন্ন পদে তিনি সিলেট, পঞ্চগড়, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও কুমিল্লায় এবং সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার হিসেবে পিরোজপুরে দায়িত্ব পালন করেন।
ফয়জুর রহমান আহমেদ পিরোজপুরে কর্মরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে একাত্ম হন। ওই সময় তিনি পিরোজপুরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাক-হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে খবর সংগ্রহ করে পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব পরিচালনায় সক্রিয় উদ্যোগ নেন। যুদ্ধ শুরু হলে অস্ত্রাগারে সংরক্ষিত অস্ত্র সরবরাহ করে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন এবং ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।
Advertisement
একাত্তরের ৪ মে পাক-বাহিনী পিরোজপুর শহর দখল করে নেয়। সে সময় ফয়জুর রহমান আহমেদ পিরোজপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থানরত তাঁর পরিবারবর্গের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরদিন অর্থাৎ ৫ মে পিরোজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চিঠি পেয়ে তিনি কর্মস্থলে এসে পৌঁছলে পাক-বাহিনী তাঁকে বন্দি করে এবং বলেশ্বর নদীর তীরে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তাঁর মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয়।
শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদ একজন সৎ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি হিসাবে পিরোজপুর এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। স্থানীয় জনগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর মৃতদেহ নদী থেকে তুলে নদীতীরে সমাহিত করে। স্বাধীনতার পর তাঁর মৃতদেহ পূর্ণ মর্যাদায় ওই কবর থেকে পিরোজপুর কবরস্থানে স্থানান্তর করা হয়।
সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণে শহিদ ফয়জুর রহমান কলকাতার সওগাত, ঢাকার ডিটেকটিভ, সিলেটের আল ইসলাহ, চট্টগ্রামের অস্তিকা ইত্যাদি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখতেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লেখকদের বই সংগ্রহ করে বিশাল এক পারিবারিক গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছিলেন তিনি। পুলিশ জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৬৫ সালে লেখা ‘দীপ নেভা যার ঘরে’ নামে তাঁর একটি গল্প-সংকলন প্রকাশিত হয়।
এসইউ/জেআইএম
Advertisement