জাতীয়

সুন্দরবনের মধু বেচতে সচিবালয় মসজিদ খাদেমের মিনি পোস্টারিং!

ভর দুপুর। সচিবালয়ের ভেতরের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে জোহরের নামাজের আজান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ভবনের পিছনের সরু গলিপথের দেয়ালের সামনে লোকজনের জটলা। দেয়ালে সাঁটানো একটি পোস্টার, তাদের সবার দৃষ্টি সেখানেই আটকে আছে। তাদের মধ্যে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দর্শনার্থীও রয়েছেন।

Advertisement

দূর থেকে শোনা গেল সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা পাশে দাঁড়ানো সহকর্মীকে বলছিলেন, মসজিদের খাদেমের কাছে সুন্দরবনের খাঁটি মধু আসবো কোত্থেকে।

আরেকজন বলেছেন, চলেন না, গিয়ে দেখি খাদেম সাহেব হয়তো কারও মাধ্যমে আনাতে পারেন। নামাজ কালাম পড়ে কী আর মিছা কথা কইবো? আর মিছা হইলে এভাবে পোস্টারিং করতে সাহস পেত না।

এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল সাদা কাগজে কালো হরফে বড় বড় অক্ষরে প্রিন্ট করা পোস্টারটি। তাতে উপরে আন্ডারলাইন লেখা ‘একটি সু-খবর।’ নিচেই লেখা, সচিবালয়ের মসজিদের খাদেমের কাছে সুন্দরবনের খাঁটি মধু ও বিভিন্ন প্রকার খেজুর এবং খুরমা বৎসরের সব সময় পাওয়া যায়।

Advertisement

কৌতূহলবশত জোহরের নামাজ শেষে খাদেমের খোঁজ করতেই মসজিদ সংলগ্ন একটি কক্ষ দেখিয়ে একজন বললেন, ওই যে ওটাই খাদেম সাহেবের কক্ষ। দরজায় পা রাখতেই লম্বা সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কী লাগবে স্যার, মধু, খেজুর নাকি জায়নামাজ।

ছোট একটি কক্ষ। একটি খাটের উপর শুয়ে আছেন এক তরুণ। আর মধ্যবয়সী খাদেম সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা ও কালো টুপি পরে মাটিতে বাটখারা নিয়ে বসে আছেন। তার সামনে রাখা আনুমানিক ১০ লিটারের একটি প্লাস্টিকের গ্যালনের অর্ধেক গ্যালন মধু।

পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার বড়ইবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা এ খাদেমের নাম আবদুল কাদির। ১৯৮৯ সালে অফিস সহায়কের সরকারি চাকরি নেন। ১৯৯৬ সাল থেকে সচিবালয় মসজিদের খাদেম হিসেবে কাজ করছেন।

আলাপকালে কাদির মিয়া বলেন, সচিবালয়ের অনেক স্যাররা সুন্দরবনের খাঁটি মধুর খোঁজ করেন। কিন্তু খাঁটি মধুর খোঁজ না পাওয়ায় তারা কিনতে পারেন না। তাই মসজিদের খাদেমের কাজের ফাঁকে সাতক্ষীরার কাশিমারির জামাল চাচা ওরফে মধু চাচার মাধ্যমে খাঁটি মধু এনে বিক্রি করছি।

Advertisement

মধু ছাড়াও রমজান মাসে খেজুর, খুরমা ও জায়নামাজ বিক্রি করেন এ খাদেম। তিনি আরও জানান, খাঁটি মধুর কেজি ৮০০ টাকা। তবে কেউ দামাদামি করলে কিছুটা কম দামেও বিক্রি করা হয়। এটি মূল কাজের বাইরে এবং লাভ খুবই সীমিত।

চলে আসার সময় জিজ্ঞাসা করলেন, স্যার, মানুষের সেবা করি, চাকরির সমস্যা হবে নাতো?

এমইউ/আরএস/এএইচ/জেআইএম