দেশজুড়ে

চুরি হওয়া শিশুকে ফিরে পেয়ে কেঁদে ফেললেন মা

বুকের ধন, হারানো মানিককে ফিরে পাবার কী যে আনন্দ তা দেখা গেলে হতভাগ্য মা হোসনে আরার চোখের আনন্দ অশ্রু দেখে। বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়ার একদিনের মাথায় তিনদিন বয়সী শিশুটিকে জেলার গাবতলী উপজেলার একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

রোববার বিকেলে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরে দেয়া হয়। এ সময় খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন হোসনে আরা।

পুলিশ জানায়, চুরি হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিশুটিকে উদ্ধারে প্রথমে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া বাজারে অভিযান চালানো হয়।

সেখান থেকে বকুল নামে একজন ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। পরে বকুলকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তোতা মিয়া ও লাবনী বেগম নামে এক দম্পতির বাড়ির বারান্দায় পরিত্যক্ত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানের খরব পেয়ে আগেই সরে পড়েন ওই দম্পতি।

Advertisement

বিকেলে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রেস ব্রিফিং করে। এতে হাসপাতালের আরএমও ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, সকালে হাসপাতালের জমাদার সর্দার রমজান আলীর নম্বরে অচেনা এক ব্যক্তি ফোন করেন।

ওই ব্যক্তি জানান, পত্রিকায় ছবি দেখে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া শিশুটিকে তিনি শনিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া বাজারের ব্যবসায়ী বকুলের দোকানে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দেখেছেন। ওই দম্পতি শিশুটিকে জন্ডিসের চিকিৎসা দিতে বাজারের এক কবিরাজের কাছে এনেছিলেন।

বকুলকে ধরলেই ওই দম্পতির খোঁজখবর দিতে পারবেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীকে জানানো হয়। তিনি তাৎক্ষণিক শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, হাসপাতাল প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারে ধুনট থানা পুলিশের এসআই খোকন কুমার কুন্ডকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া বাজারে পাঠানো হয়। তিনি প্রথমে বাজারের ব্যবসায়ী বকুল মিয়াকে আটক করেন।

Advertisement

এরপর তাকে সঙ্গে নিয়ে গাবতলী উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি লাবনী বেগম এবং ফুলমিয়ার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের খবর পেয়ে আগেই সরে পড়েন ওই দম্পতি। পরে ফুলমিয়ার বাড়ির শয়ন কক্ষের বারান্দা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ফুলমিয়ার বাড়ি মাঝবাড়ি হলেও শ্বশুরবাড়ি কাজিপুরের ঢেকুরিয়া গ্রামে। শনিবার হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে চুরি করে বগুড়া সদরের বারপুর এলাকার মাহফুজার রহমানের স্ত্রী রত্না বেগম।

এরপর রত্না শিশুটিকে কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া গ্রামে লাবনী-ফুলমিয়া দম্পতির কাছে পৌঁছে দেয়। শিশুটিকে জীবন্ত উদ্ধার ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

এ কারণে চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের আগে শিশুটিকে উদ্ধারে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখন চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে তৎপরতা চালানো হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিধান চন্দ্র মজুমদার এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন মিশু, সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আছলাম আলী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, হারানো শিশুকে ফেরত পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা হোসনে আরা বেগম ও বাবা রুবেল হোসেন।মা হোসনে আরা বলেন, বুকের ধনকে এভাবে ফিরে পাব তা ভাবিনি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগ থেকে শিশুটি চুরি যায়। শিশুটির নানি রেহেনা বেগমকে পটিয়ে কৌশলে তিনদিন বয়সী শিশুটিকে চুরি করেন অপরিচিত এক নারী।

কোলের শিশু হারিয়ে প্রায় পাগল হয়ে পড়েন মা হোসনে আরা বেগম। এ নিয়ে হাসপাতাল প্রশাসন ও পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়।

লিমন বাসার/এএম/জেআইএম