যাযাবর রাসেল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি রেডিও সার্কেল এবং চ্যানেল আইয়ে চাকরির পর বর্তমানে রেডিও স্পাইসে সিনিয়র সাউন্ড প্রডিউসার হিসেবে কর্মরত আছেন। ইউটিউবে তার ১৪টি ট্র্যাক রয়েছে। যার বেশির ভাগের ভিউ লাখের উপরে। তার করা সরলপুর ব্যান্ডের ‘রাঁধে’ গানটির ভিউ অনেক আগেই ছাড়িয়েছে এক মিলিয়ন। ‘তুমি বাসো কি না’, ‘পিরিতি’, ‘কেন এলে না’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় ফোক গান নতুন সংগীত আয়োজনে নতুনভাবে উপস্থাপন করে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।
Advertisement
যাযাবর রাসেল ‘সহকারী সংগীত পরিচালক’ হিসেবে কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি অ্যালবামে। কাজ করছেন মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও । নিজের লেখা ও সুরে ‘পাগল পাগল লাগে’ গানসহ নিজের কিছু গানও পেয়েছে অনেক জনপ্রিয়তা। জিলাপী স্টুডিও এবং নিজের চ্যানেল যাযাবক্সে গেলে তার গান শোনা যায়।
যাযাবর রাসেলের ক্যারিয়ার এবং সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে জাগো জবসের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন মেহেদী শামীম।
জাগো জবস : শুরুতেই আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন-যাযাবর রাসেল : মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক গতানুগতিক হলেও সবসময় নিজের স্বপ্নের এবং ভালো লাগার বিষয় মিউজিক নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল আগে থেকেই। তাই সেই সুযোগ হাতছাড়া করিনি। ইউডার সংগীত বিভাগে আমার স্নাতক প্রায় শেষের পথে। এর পাশাপাশি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর শর্টকোর্স করেছি। নিজে বেশকিছু স্টাডি করেছি। সামনে সংগীত নিয়ে আরো জানতে এবং পড়তে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।
Advertisement
জাগো জবস : কাজের শুরুর সময়ের অভিজ্ঞতাটা যদি শেয়ার করতেন-যাযাবর রাসেল : এই বিষয়টা বেশ মজার, কারণ আমার চাকরিজীবনের শুরুটা হয়েছিল একজন কথাবন্ধু মানে আরজে হিসেবে। তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না কথাবন্ধু হওয়ার। স্ট্রাগলের সময় যখন জবের প্রয়োজন ছিল; তখন আসে অডিশনের সুযোগ। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির অভ্যাসের বদৌলতে গুছিয়ে কথা বলা হতো কিছুটা। পাশাপাশি একজন মিউজিসিয়ান হওয়াতে আরজে হিসেবে জয়েন করতে পারি। পরে যদিও কাজটা অনেক সময় এবং শ্রম দিয়ে আমি শিখেছি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনে এবং প্রতিষ্ঠানে শিখিয়েছি। ততদিনে অবশ্য ৩ বছরের রেডিও এবং প্রায় আড়াই বছরের টিভি উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা আমার ঝুলিতে যুক্ত হয়ে গেছে। আরজে থেকে অনেক ধাপ পেরিয়ে প্রডিউসার। এরপর হেড অব প্রোগ্রাম আর সবশেষে আমি রেডিওটির হেড অব অপারেশন হিসেবে কাজ করেছি ।
জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় পেশাটিকে ভালোবেসে ফেললেন?যাযাবর রাসেল : আমার বন্ধু নির্জর এবং আমার ব্যান্ড ‘যাযাবর’ আমার মিউজিকে আসার একমাত্র কারণ। একটা ব্যান্ড করার স্বপ্ন থেকেই দুই বন্ধুর গিটার শেখা। সেখান থেকেই শুরু। এরপর বিভিন্ন গুরুর কাছে গিটার শেখা, তাদের কাছ থেকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আসলে বাংলার ফোক আমাকে প্রচণ্ডভাবে টানে। এছাড়া নিজের লেখাগুলো গান হতে চাইতো, এটাও একটা শক্তিশালী অনুপ্রেরণা ছিল এ কথা বলতেই হবে।
জাগো জবস : গান এবং সংগীত পরিচালনার জন্য আপনাকে আর কী কী করতে হয়?যাযাবর রাসেল : আধুনিকতার এই সময়ে এসে পর্যাপ্ত অর্থ, ইক্যুইপমেন্ট বা অন্য আরো বেশ কিছু সুবিধার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একজনই একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন । আমি নিজে লিখি, সুর করি এবং গাওয়ার চেষ্টা করি। পাশাপাশি নিজে সংগীত আয়োজন করার চেষ্টাও করে থাকি। অনেক সময় নিজে প্লে করে রেকর্ড করে থাকি। গানের সঙ্গে যেন অবিচার না হয় সেটাই থাকে মুখ্য বিষয়, অন্তত আমার কাছে।
জাগো জবস : এ বিষয়ে আপনার কি কোনো প্রশিক্ষণ রয়েছে?যাযাবর রাসেল : গিটারটা ঠিকভাবে শেখা বলা গেলেও তেমনভাবে গানের ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমার শুরুর সময় ছিল না। গিটার শেখার পাশাপাশি গুণী শিল্পীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নানারকম ধ্যান-ধারনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন তো আমার পড়াশোনার বিষয়ই গান। শেখাটা আসলে চলছে, এ শেখার কোনো শেষ নেই। তাই যতদিন বেঁচে আছি শিখে যেতে চাই।
Advertisement
জাগো জবস : আপনার পেশায় আয় ও সুযোগ-সুবিধা কেমন?যাযাবর রাসেল : এখানে প্রফেশনাল হতে গেলে ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি। তাই হয়তো বেশিরভাগই মিউজিকের পাশাপাশি আরো কিছু করছে। সেটার পাশাপাশি মিউজিকটা নিজের মাঝে বাঁচিয়ে রাখছে। আর এখন ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে মিউজিক আয়ের মুখ দেখছে। যা নিয়ন্ত্রিত এবং সুন্দরভাবে এগোলে ভালো কিছু বয়ে আনবে।
জাগো জবস : যারা আপনার মতো কাজ করতে চান; তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?যাযাবর রাসেল : আমার পরামর্শ থাকবে মিউজিকের মতো গভীর কোনো বিষয় না শিখে না জেনে খুব ভালো করে জানা যায় না। সেখানে উপস্থাপন আরো অনেক কঠিন আর বিশাল একটা ব্যাপার। তাই আমরা যা করতে চাই তা নিয়ে আমাদের পড়াশোনা আর শেখার মনোভাব বাড়াতে হবে। যারা শুরু করার কথা ভাবছেন; তাদের এই কথা বলেই স্বাগত জানাবো যে– পারফর্ম করার চেয়ে শেখাটা অনেক বেশি জরুরি।
জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?যাযাবর রাসেল : সফলতা অন্য সবকিছুর মতো অনেক বেশি আপেক্ষিক। একজন মানুষ নানা ক্ষেত্রে জীবনের নানা দিকে নানা রকম ভাবে হয়তো সফল হতে চায়। তবে একজন শিল্পী বা সংগীত পরিচালক হিসেবে যদি দেখা হয়, তাহলে আমার কাছে সফলতার মানে হলো নিজের কাজ দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নেয়া, মরার পরেও বেঁচে থাকা।
এসইউ/পিআর