ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলনের উদ্বোধনীতে বাস্তবধর্মী সুরারিশমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। তিনি বলেন, আমি আশা করি দারিদ্র বিমোচন, বিশ্ব শান্তি স্থাপন এবং সর্বোপরি মানবতার কল্যাণে আপনারা বাস্তবধর্মী সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন। নিজ নিজ দেশে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তবেই আমাদের-আপনাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। শনিবার রাতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। এসময় সম্মেলনের সভাপতি ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, সেক্রেটারি মার্টিন চুনগুং, আইপিইউ-ভুক্ত বিভিন্ন দেশের স্পিকার, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক কোরের সদস্য ও ডেলিগেটসরা উপস্থিত ছিলেন।শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব নতুন এক উপদ্রবের মুখোমুখি হয়েছে। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। মানুষের শান্তি বিনষ্ট করছে। জঙ্গিবাদ আজ কোন নির্দিষ্ট সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। তা না হলে আমরা আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাব।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা চলছে। তবুও আমি এই সমাবেশের সামনে বিষয়টি আরেকবার উত্থাপন করছি এ কারণে যে, এই পরিবর্তনের ফলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছি। এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে পরিত্রাণের জন্য যে সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন ফোরামে দেয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।তিনি বলেন, আমরা একটি দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত, ন্যায়-ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ, বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকারসহ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করছেন।গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অতন্দ্র প্রহরী গণমাধ্যম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম একদিকে যেমন বিকশিত হয়েছে, তেমনি নিশ্চিত করা হয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।আইপিইউ সম্পর্কে তিনি বলেন, আইপিইউ এর সাথে আমাদের সম্পর্ককে আমরা গভীরভাবে সম্মান করি। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত।এই সম্মেলন একটি তাৎপর্যময় ঘটনা উল্লেখ করে দেশের জনগণ এবং নিজের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী সকলকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আশা করছি বাংলাদেশে আপনাদের অবস্থান আনন্দদায়ক এবং ফলপ্রসূ হবে।‘সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণে এ সম্মেলনের উদ্বোধন হলেও মূল কার্যক্রম চলবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। চলবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় তিনি আইপিইউ ওয়েভ টিভির উদ্বোধন ও স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলো ৩৫ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথমে কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে বাঙালির লড়াই-সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও আবহমান বাংলার সাংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরা হয়। এরপর থ্রিডি ম্যাপিং ও অটো প্রজেকশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শেখ হাসিনার শাসনামল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন ও বাংলার ঐতিহাসিক স্থাপনার চিত্র। যেখানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বতার চিত্র।সাংস্কৃতির অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা আন্দোলনের উপর একটি বেদনা বিধুর সংগ্রামের কোরিওগ্রাফি দেখানো হয়। হঠাৎ রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাংলা চাই স্লোগানে মুখোরিত হয়ে ওঠে নৌকার উপর বসানো মূল মঞ্চ। এরপর ভাষা সংগ্রামীদের উপর নির্মম অত্যাচারের চিত্র। এরপর চলে আসে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের চিত্র। মাটিতে বসে লক্ষাধিক জনতা। মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক এই ভাষণ শুনে শিহরিত হয়ে ওঠেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া কয়েক হাজার দর্শক।এইচএস/এআরএস
Advertisement