‘যদি কখনো ভালোবাসো’- একটি নির্ভেজাল জীবনমুখী গল্পের বই। বইয়ে স্থান পাওয়া ১০টি গল্পেই চলমান জীবনের নিখুঁত বয়ান রয়েছে। কোনো কোনো গল্পে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে কঠিন সত্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
Advertisement
‘যদি কখনো ভালোবাসো’ বইটি সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন সুজনের প্রথম গল্পগ্রন্থ। এ বইয়ের প্রতিটি গল্পের বর্ণনায় এক ধরনের নিজস্বতা রয়েছে, যা পাঠকদের কাছে লেখককে আলাদা পরিচয়ে তুলে ধরবে। তিনি অনেকটা নিজস্ব ভঙ্গিমায় পাঠকের সামনে হাজির হয়েছেন।
‘যদি কখনো ভালোবাসো’র অন্যান্য গল্পের পাশাপাশি তিনটি গল্প পাঠককে বেশি আকৃষ্ট করবে বলে আমি মনে করছি। সেই সঙ্গে সংবেদনশীল মনকে তুমুল আলোড়িত করবে বলে আমার বিশ্বাস। এর অন্যতম গল্পটি হচ্ছে ‘চুমু’। এই গল্পের পরতে পরতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অকৃত্রিম ভালোবাসা চিত্রায়িত হয়েছে। স্ত্রীর প্রতি এমন ভালোবাসা আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বিরল।
‘বাসর বিড়ম্বনা’ গল্পে একজন পুরুষের ভালোবাসা না পাওয়ার আকুতি প্রগাঢ়ভাবে ফুটে উঠেছে। গল্পটির শেষ প্যারা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি- ‘...এরপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এতদিন বিয়ে করতে চাননি কেনো?’আর আবেগ সংবরণ করতে পারলাম না। হু হু করে কেঁদে উঠলাম। কেঁদে কেঁদে বললাম, ‘জেসমিন সত্যি বলছি, কেউ আমাকে ভালোবাসেনি বলে বিয়ে করিনি। ভেবেছিলাম ভালোবেসেই বিয়ে করবো। কিন্তু হয়নি। বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছি।’ কেঁদে ওর বুক ভিজিয়ে দিয়েছি।’
Advertisement
অন্যদিকে ‘বিয়ের ছুটি’ শীর্ষক গল্পে বর্তমান কর্পোরেট চাকরিজীবীদের ছুটি না পাওয়া কিংবা কম পাওয়ার নিদারুণ কষ্টের কথা সরস ভাষায় তুলে আনা হয়েছে। তবে বইয়ের কোনো কোনো গল্পে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। বিবরণে আরো সাবলীল হলে সঙ্গতকারণেই পাঠকের ভালো লাগতো। এছাড়া অহেতুক হাসানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা গল্পকে খানিকটা দুর্বল করেছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, গদ্যের পাঠকরা ‘যদি কখনো ভালোবাসো’ বইটি হাতে তুলে নিলে নিরাশ হবেন না। বইটির বহুল পাঠ কামনা করছি। আশাকরি, পরবর্তী সৃষ্টির ক্ষেত্রে আরো সচেতনভাবে পা ফেলবেন। প্রথম সৃষ্টি থেকে শিক্ষা নিয়ে সৃজনকর্ম অব্যাহত রাখবেন। সে সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাই।
চিত্রশিল্পী আরিফুল হাসানের প্রচ্ছদে এবারের অমর একুশের গ্রন্থমেলায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১২০ টাকা।
এসইউ/পিআর
Advertisement