মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা আথিফের শেষ ঠিকানা হলো রাজশাহীতেই। শনিবার বাদ জোহর নগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। রাউধার পরিবার ও সহপাঠী ছাড়াও এতে অংশ নেন স্থানীয় লোকজন।
Advertisement
মরদেহ দাফনে অংশ নেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় রাউধার মরদেহের দাফন সম্পন্ন হয়। রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আথিফ।
এর আগে কবরস্থানের ভেতরের রওজাতুস সালেহিন জামে মসজিদ চত্বরে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে বেলা ১টার দিকে রাজশাহীর পর্যটন মোটেল থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনার আইশাদ শান শাকির ও কমনওয়েলথের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদ কবরস্থানে আসেন।
এরপর দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়িতে রাউধার মা, বাবা ও ভাইসহ ৮-৯ জন নিকটাত্মীয় আসেন সেখানে। এ সময় রাউধার মা আমিনা মহাসিমাত মেয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তারা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি। পরে মেয়ের মরদেহ দাফনের সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন আমিনা। পরিবারের সদস্যরা তখনই তাকে নিয়ে চলে যান।
Advertisement
গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রীনিবাসের দ্বিতীয় তলার ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধা আথিফের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউধার বাড়ি মালদ্বীপের মালেতে। তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই কক্ষে ওঠেন রাউধা।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাজশাহী আসেন রাউধার স্বজনসহ মালদ্বীপের প্রতিনিধি দল। পরিবারের সিদ্ধান্তে শুক্রবার দুপুরের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। কিন্তু পরিবারের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় মরদেহ হস্তান্তর না করে হাসপাতালের হিমঘরে নেয় পুলিশ।
শনিবার সকালে রাজশাহীতে রাউধার মরদেহ দাফনের সিদ্ধান্ত জানায় পরিবার। এরপর ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল। পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এনিয়ে ওই দিনই হাসপাতালের সচিব আব্দুল আজিজ রিয়াজ থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদেনের অপেক্ষা করছে পুলিশ।
Advertisement
এছাড়া ঘটনা খতিয়ে দেখছে উপাধ্যক্ষ ডা. আব্দুল মুকিত সরকারের নেতৃত্বে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরীর শাহ মখদুম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান জানান, রাউধার মরদেহ রাজশাহীতে দাফনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে। অনুমতি চেয়ে মালদ্বীপের দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। অনুমতি পেয়ে মরদেহ দাফনের উদ্যোগ নেয় পুলিশ।
রাউধা আত্মহত্যা করেছেন-এটা অনেকটাই নিশ্চিত তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে এর কারণ সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার ধারণা নেই।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ থাকেন ভারতে। আর মা আমিনা মহাসিমাত মালদ্বীপে। তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। আর এ জন্য রাউধার মরদেহ নিজ দেশে নেয়া নিয়েও তৈরি হয় জটিলতা। এছাড়া পড়ালেখার চাপ অথবা প্রেমঘটিত বিষয়কেও তদন্তে সামনে আনছে পুলিশ।
বিখ্যাত সাময়িকী ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে। ‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদযাপন’ (সেলিব্রেটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের এই মডেল।
ভোগ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে রাউধা বলেছিলেন, মডেলিং আমার কাছে পেশা নয়, শখই বেশি। পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সাহায্য করাই আমার স্বপ্ন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/জেআইএম