ঘড়ির কাঁটা তখন হয়ত বিকেল তিনটা ছুঁয়েছে। হঠাৎ বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের ভেতর থেকে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ঢোকার পথে টানেলে এক ভদ্রলোককে নিয়ে ঢুকলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ।
Advertisement
ভদ্রলোকের মাথা মুড়ানো। মাঠের ধারে বসে বাংলাদেশের অনুশীলন দেখতে থাকা দুই সিনিয়র সাংবাদিকের সামনে এসে রীতিমত কুইজ দিয়ে বসলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ভাই বলেন তো উনি কে? কোন ক্লু দিব না, বলতে হবে।
শুধু এটুকু বলি, আপনারা দীর্ঘ দিন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট কভার করেছেন। তাকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। বলতে হবে উনি কে?
দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িত ওই দুই সিনিয়র সাংবাদিক কিছুক্ষণ স্মৃতির অলিতে-গলিতে খুঁজে বেড়ালেন। অনেক হাতড়েও পেলেন না। অবশেষে খালেদ মাহমুদ নিজেই বলে উঠলেন আরে ভাই চিনলেন না! উনি গুরুগে। সুদর্শনা গুরুগে। মোহামেডানের হয়ে সুনামের সঙ্গে খেলেছেন কয়েক বছর।
Advertisement
তারপর আর কিছু বলতে হয়নি। ওই দুই সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে সেই অতীতে ফিরে গেলেন গুরুগে। ৯০ দশকে যারা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট নিয়মিত দেখতেন এবং খোঁজ খবর রাখতেন তারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি গুরুগের কথা। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। একদম কপিবুক ব্যাটিং করতেন।
১৯৮৯-১৯৯০ সালে ওয়ারির হয়ে ঢাকা লিগে যাত্রা শুরু। তারপর ১৯৯৩ পর্যন্ত টানা তিন বছর ঢাকা মোহোমেডানের হয়ে খেলেছেন। তখন ছিল মোহামেডানের রমরমা দিন। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আর আমিনুল ইসলাম বুলবুল তখন মোহামেডানের হয়ে খেলতেন।
সাথে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরিয়ান আজহার হোসেন সান্টু, নুরুল আবেদিন নোবেল, সেলিম শাহেদ, মোহাম্মদ রফিক- প্রমুখ জাতীয় দলের ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি তখন সাদা কালো শিবিরে। গুরুগে যখন মোহামেডানে যোগ দেন (১৯৮৯-৯০) আজকের বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন তখন মোহামেডানেই খেলতেন।
খালেদ মাহমুদ জাগো নিউজকে জানালেন, আমি গুরুগের সঙ্গে দুই বছর মোহামেডানে খেলেছি। ১৯৯৩ সালে শেষবার ঢাকা লিগ খেলতে আসেন লঙ্কান এই সাবেক ক্রিকেটার। তারপর কেটে গেছে দুই যুগ; কিন্তু গুরুগে ভোলেননি ঢাকা মোহামেডানকে। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটকে। বাংলাদেশকে। তার স্মৃতিতে এখনো সব জাগরুক।
Advertisement
তাই তো এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন কত নাম- আরে ওই যে অফস্পিনার কাম ওপেনার ছিলেন কি যেন নাম? ওহ মনে পড়েছে- আজহার হোসেন সান্টু ভাই। এভাবেই ঠিক দুই যুগ আগে ফিওে গেলেন তিনি। তারপর একে একে নান্নু, বুলবুল, রফিক কত নাম চলে আসলো গুরুগের মুখে।
গুরুগে যখন ঢাকায় খেলেন এখানকার ক্লাব ক্রিকেট তখন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার ভরা। সে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বললেন, আমি যেবার প্রথম ঢাকা লিগে খেলি তখন, দুলি মেন্ডিস, অতুলা সামারাসেকেরা, ব্র্যান্ডন কুরুপ্পু, সালি আহাঙ্গামার মত সাবেক শ্রীলঙ্কান জাতীয় ক্রিকেটাররা খেলেন। আমার মনে আছে ৪০-৫০ জন লঙ্কান ক্রিকেটার বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলতেন।’
যারা ক্রিকইনফো ব্রাউজ করে এতক্ষণে গুরুগের প্রোফাইল খুলে বসে গেছেন, তাদের জন্য বলা- এ বাঁহাতি কপিবুক ব্যাটসম্যান শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেননি কখনো। তবে ঢাকা লিগে বেশ সুনামের সাথে খেলেছেন। মোহামেডানের হয়ে যে তিন বছর খেলেছেন প্রতিবছরই দলে অন্যতম সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছেন।
ওই সময় নান্নু-বুলবুলের মতই মোহামেডানের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন গুরুগে। সাদা কালো শিবিরের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিও আছে তার। ১৯৯১-১৯৯২ সালে মোহামেডান যে বার চ্যাস্পিয়ন হয়, সে বার লিগ নির্ধারনী ম্যাচে গুরুগে আর মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর জুটিতেই আবাহনীর রান টপকে জিতেছির মোহামেডান। সে ম্যাচের স্মৃৃতি এখনো তার পরিষ্কার মনে আছে।
আগামীকাল যে মাঠে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে, বর্তমানে এই সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের ক্রিকেট ম্যানেজার গুরুগে। এখনো মনে করেন, আশির দশকের শেষ ও ৯০ দশকেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের মান ভাল ছিল। তার অনুভব, তখন সত্যিকার অবকাঠামো সুদৃঢ় ছিল না হয়তো। প্র্যাকটিস সুযোগ সুবিধা ভাল ছিল না। আমরা কংক্রিটের পিচে প্র্যাকটিস করে টার্ফে ম্যাচ খেলতাম। এখন এসব কল্পনাও করা যায় না।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে দারুণ খুুশি গুরুগে। ভাবতেই খুব ভাল লাগে বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তার অনুভব, বিসিবি ক্রিকেট উন্নয়নে বেশ সচেষ্ট। সুযোগ সুবিধা ও আনুসাঙ্গিক উপকরণ অবকাঠামো উন্নত হওয়ায় এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়েছে।
তার মাথায় ছিল চুল ভরা। এখন ন্যাড়া মাথা কেন? এ প্রশ্নের জবাবে গুরুগে জানালেন, ২০০৪ সালে এই সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে স্থানীয় এক বোলারের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। ছোট খাট অপারেশনও লেগেছে। তারপর থেকেই মাথার চুল পড়ে গেছে।
এআরবি/আইএইচএস