আগেই জানা, গল টেস্টে শোচনীয় হারের পর শুধু ক্রিকেটাররা এক অন্যরকম বৈঠকে বসেছিলেন। কোচ, ম্যানেজারতো প্রশ্নই আসে না। কোন সহকারি বা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকও ছিলেন না এ বৈঠকে। যেখানে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছিলেন মুশফিক, তামিম ও সাকিবরা।
Advertisement
আমরা যত বাজে ভাবে হেরেছি, আসলে তত খারাপ দল আমরা নই। বরং এর চেয়ে অনেক ভালো খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে। শুধু ভালো করার সামর্থ্যই নেই, শ্রীলঙ্কার এই দলকে টেস্টে হারানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্যও আছে আমাদের। এখন আমরা যার যার কাজ ও দায়িত্ব-কর্তব্য ঠিকমত পালন করতে পারি আর মাঠে সামর্থ্যের পুরোটা প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব হয়, তবে আমরা শেষ টেস্ট জিততে পারবো। এমন অনুভবটাও হয়েছিল আলোচিত। জাগ্রত।
এবার ওয়ানডে সিরিজের আগে টাইগারদের ভেতরে আরও একটি বোধ জন্মেছে। কেউ ঢুকিয়ে দেয়নি। কিংবা কোচ-ম্যানেজার বা বোর্ড শীর্ষ কর্তাদের কেউ বলেননি। মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য, সাব্বির, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজ, তাসকিন, মিরাজরা নিজেদের মধ্য কথা বলেই শরীরী ভাষা বদলে ফেলেছেন। আগের যেন কোন সময়ের চেয়ে টাইগাররা অনেক স্বপ্রতিভ। টিম হোটেল, প্র্যাকটিসে, ড্রেসিং রুমে আর খেলার মাঠে তাদের তেজোদ্দীপ্ত রূপ।
সবার শরীরী ভাষা বদলাতে হবে। ভালো খেলি, খারাপ খেলি, হারি বা জিতি, আমাদের শরীরী ভাষা বদলাতে হবে। মানবিকভাবে দৃঢ় হতে হবে আরও। যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা অনমনীয় থাকবো। হাল ছাড়বো না এই তাগিদ, এই বার্তা প্রতিটি সদস্যকে দিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক।
Advertisement
গত প্রায় চার সপ্তাহ শ্রীলঙ্কা সফরে টাইগারদের যে একটি বিষয় চোখে পড়েছে, তাহলো শরীরী ভাষা। এমন নয়, তামিম, সৌম্য, মুশফিক, সাকিব, সাব্বির, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজ, তাসকিন ও মিরাজরা আকাশে উড়ছেন। তারা নিজের মতই আছেন। কিন্তু চোখে মুখে ভয়-ডর, শঙ্কা-সংশয়, সন্দেহ ও দুশ্চিন্তার বলিরেখা নেই। সবাই ভয় শূন্য। একদম স্বাভাবিক।
আজও অনুশীলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র হাই হ্যালো করলেন সবাই। পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি দু`চারটি কথাও বললেন। যেটা আগে খুব কমই চোখে পরতো। কোন ভিনদেশি দলের সঙ্গে খেলার সময় কেমন যেন হয়ে যেতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। শরীরী অভিব্যক্তিই যেতো বদলে। কেমন যেন ফ্যাকাশে দেখাতো। চোখে মুখে আড়ষ্টতার ছাপ থাকতো পরিষ্কার।
এবার তার কিছুই নেই। শরীরী অভিব্যক্তি একদম স্বাভাবিক। সবার মাঝেই একটা অন্যরকম প্রাণ চাঞ্চল্য। সবাই আগের চেয়ে অনেক বেশি পজিটিভ। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ভালো খেলতে সংকল্পবদ্ধ। মোদ্দা কথা, টাইগারদের ভেতরের অভিব্যক্তি মানে শরীরী ভাষা বদলে গেছে।
কীভাবে বদলে গেল? আর বদলানোর ভেতরের কাহিনীই বা কি? তা জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। আজকের প্রেস কনফারেন্সে সে কথাই জানা হলো। টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘শরীরী ভাষা বদলানোর তাগিদ আমরা নিজেরাই অনুভব করেছি। বলতে পারেন, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
Advertisement
কেন কিভাবে কার সঙ্গে এই শরীরী ভাষা বদলানোর তাগিদ? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, অন্য কারো কাছে এ প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হইনি। কারো কাছে প্রতিশ্রুতিও দেইনি। আমরা নিজেরা বসে নিজেদের মধ্যে ঠিক করেছি। অনুকূল-প্রতিকূল আর পরিবেশ পরিস্থিতি যেমনই থাকুক না কেন, আমরা হাল ছাড়বো না।’
কি কারণে, কোন অনুভব ও বোধ থেকে শরীরী ভাষা বদলের তাগিদ? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, ক্রিকেটে বা স্পোর্টসে শরীরী ভাষা একটা বড় ব্যাপার। আমরা এই জিনিসটা পরিবর্তন করতে চাই। ম্যাচ আমরা হারি বা জিতি। শরীরী ভাষা সব সময় ঠিক রেখেই যেন চলতে পারি, এ চিন্তা ও বোধ জাগ্রত করার চেষ্টা চলছে। আমরা অনুভব করার চেষ্টা করছি, সব সময় জিতবো না। তবে শরীরী ভাষা বদল কাজে আসবে। যেটা প্রতিষ্ঠিত বা অন্যান্য বড় দল করে থাকে। এই জিনিসটা আমাদের বড় প্রতিজ্ঞা। এটা যদি পরিবর্তন করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে খুব কাজে লাগবে।’
এআরবি/এমআর/পিআর