বাবা কিংবা মা কাউকে এখনো ডাকতে শিখেনি জারির। জারির শুধু ‘পাখি’ ও ‘ভাইয়া’ ডাকটিই মাত্র শিখেছে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। বাবাকে আর ডাকতে পারবে না জারির। কারণ বাবা র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ জঙ্গিদের বোমার বিস্ফোরণে স্প্রিন্টারের আঘাতে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
Advertisement
শুক্রবার সেনা বাহিনীর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রথম জানাজা নামাজ শেষে র্যাব সদর দফতরে আয়োজন চলছিল দ্বিতীয় জানাজার। র্যাব সদর দফতরের প্রধান ফটকের নিচে আবুল কালাম আজাদের বড় ছেলে আফনান ইশরাত জারিফকে নিয়ে হাউমাউ করে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ভাই ইউসুফ হিমেল।
তিনি বলেন, আমার ভাই রাসেল (ডাকনাম) খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। ভাই বলে বলছি না তিনি গণমানুষের কাছেই ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল গত বুধবার রাতে। তিনি রাত সোয়া ১২টার দিকে বাসায় ফেরেন। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে কাজের কথা বলে ফের বেরিয়ে পড়েন। এরপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি।
Advertisement
ইউসুফ হিমেল বলেন, তিন শিশুকে নিয়ে এখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। জারিফ তবুও কিছুটা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু মেয়ে জারা ও জারির কিছুই বুঝে না। ওরা বুঝতে পারছে না ওদের বাবাকে আর কখনো দেখা যাবে না।
ছোট ছেলে জারির বয়স এখন ২ বছর তিন মাস। ও শুধু ‘পাখি’ও ‘ভাইয়া’ডাকতে পারে। বাবা ও মা কাউকে এখনো ডাকা শিখেনি। কিন্তু যখন বাবা ডাক শিখবে তখন জারির আর বাবাকে দেখতে পাবে না। বাবার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা কিছুই জুটবে না ওর কপালে।
উল্লেখ্য, র্যাব গোয়েন্দা প্রধান (ডিরেক্টর-ইন্টেলিজেন্স) লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ থাকতেন মিরপুরের একটি বাসায়। তিনি র্যাব-১২ এর সিও এর দায়িত্ব পালন শেষে র্যাব গোয়েন্দাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
কর্মজীবনে ব্যস্ত এ মানুষটি গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানার পাশে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন।
Advertisement
ওই রাতে তাকে হেলিকপ্টারে সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুরে নিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে বুধবার চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকায় এনে আবারও সিএমএইচে রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি।
শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টে। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে বিকেল ৩টায় র্যাব সদর দফতরে দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর বনানীর সামরিক কবরস্থানে শায়িত করা হয় তাকে।
জেইউ/এআর/জেএইচ/এএইচ/পিআর