মতামত

নৌপথে আর কত মৃত্যু?

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে পানগুছি নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আবারো প্রমাণ করলো নৌপথ এখনো কতোটা অনিরাপদ। নৌদুর্ঘটনা রোধে নানা রকম উদ্যোগের কথা বলা হলেও যাত্রী নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। যে কারণে অহরহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেই চলেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। নইলে এ ধরনের মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকবে। নিরীহ নিরপরাধ মানুষগুলো লঞ্চ মালিকের লাভ ও লোভের বলি হয়ে লাশের ভেলা হয়ে নদীতে ভাসবে।

Advertisement

গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোলেড়গঞ্জের পানগুছি নদীতে খেয়া পারাপারের জন্য ব্যবহৃত ইঞ্জিন চালিত একটি ট্রলার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। এতে এ পর্যন্ত ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ আছে আরো ১০ জন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। দেশে নৌদুর্ঘটনা নতুন নয়। প্রাণহানির ঘটনাও যেন অনেকটা রুটিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর নৌ-দুর্ঘটনায় ২০৭ জন জীবন হারাচ্ছেন। নৌ, সড়ক ও রেল খাত রক্ষা জাতীয় কমিটির হিসাব মতে, ১৩ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৬৮৮ এবং নিখোঁজ হয়েছেন এক হাজার বাইশ জন। মানুষের জীবনের কোনো মূল্য থাকলে এভাবে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হতো না। দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে দেশে প্রতিবছর নৌ-দুর্ঘটনা বাড়লেও তা দেখার যেন কেউ নেই। নৌ মন্ত্রণালয় অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে নানা কথা বলে কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু একটা হয় না। নাহলে দুর্ঘটনায় এতো প্রাণহানি ঘটে কী করে?

নৌপথগুলোতে ফিটনেসবিহীন নৌযান চালানো দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু নৌপথে ফিটনেসবিহীন নৌযানের ছড়াছড়ি। এছাড়া প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যতিরেকেই চলে অধিকাংশ নৌযান। এসব তদারকির  জন্য রয়েছে নৌপরিদর্শক। এছাড়া ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়মিত পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌপথ নিরাপদ হোক-এটিই দেখতে চায় মানুষজন।

এইচআর/এমএস

Advertisement