সেই ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু যাত্রা। তারপর ৪২ বছর ধরে ওয়ানডে খেলছে শ্রীলঙ্কা। এই সাড়ে তিন যুগের ইতিহাস ঘাটার দরকার নেই। সর্বশেষ চারটি হোম সিরিজের ফল লক্ষ্য করলেই পরিষ্কার বোঝা যাবে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ।
Advertisement
ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে এ সিরিজের আগ পর্যন্ত চার চারটি সিরিজ খেলেছে লঙ্কানরা। এমন একটি সিরিজও নেই, যেখানে তারা অন্তত একটি ম্যাচ জিতেনি। ২০১৪ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-২ ব্যবধানে সিরিজ জয়।
এরপর পাকিস্তানের সাথে দেশের মাটিতে প্রবল লড়াইয়ের পর ৩-২ তে হেরে যাওয়া। তারপর আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩-০ তে সিরিজ জয়। আর সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার সাথে ২০১৬ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ৪-১ ব্যবধানে হার। বাংলাদেশের কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করলেও নিজ দেশের ইতিহাস-পরিসংখ্যান ভালোই জানা চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের।
তার প্রমাণ মিলল আজ অনুশীলনে। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সাথে আলাপে কথা বলার এক পর্যায়ে আগামী পরশু তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন। টাইগার কোচের কাছে জানতে চাওয়া হলো সিরিজ জয়ের বিষয়ে তিনি কতটা আশাবাদী?
Advertisement
এর জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশ কোচ খুবই সতর্ক ও সাবধানে পা ফেলেছেন। তার কণ্ঠে ও চোখে-মুখে আশার ঝিলিক ছিল পরিষ্কার। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হেলাফেলা করে হালকাভাবে নেওয়ার কথাও বলেননি। বরং আগে বলে নিয়েছেন, ‘শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে সব সময় খুব ভালো দল। কঠিন ও প্রবল প্রতিপক্ষ। আমার মনে পড়ে না যে, এক সিরিজে শেষ কবে সব মাচ হেরেছে লঙ্কানরা। কাজেই ১ এপ্রিল শেষ ম্যাচে আমাদের জিততে সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে হবে। আমি নিশ্চিত দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা জিততে মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে।’
ওপরের অংশ শুনে ভাববেন না নিজ দলের সম্ভাবনা সম্পর্কে বুঝি কম বলেছেন হাথুরু। মোটেই তা নয়। পরের কথায় ফুটে উঠেছে তার সত্যিকার মনোভাব। তার সোজা-সাপ্টা কথা, ‘প্রক্রিয়াগুলো ঠাক রাখার পাশাপাশি সামর্থ্যের সঠিক প্রয়োগ ঘটাতে পারলে জয়ের ব্যাপারে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। আমরা শুধু যে ১-০ তে এগিয়ে আছি তাই নয়, এখন আর সিরিজে হারার প্রশ্নই আসে না। লঙ্কানদেরও খুব ভালো খেলতে হবে। আর আমাদের সিরিজ নিশ্চিত করতে হলে সেরা খেলাটাই খেলতে হবে।’
তার কোচিংয়ে ২০১৪ সালে জুন মাস থেকে খেলছে বাংলাদেশ। প্রায় তিন বছর হতে চলল। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বমানের তিন দলের সাথে ঘরের মাঠে সিরিজ বিজয়ের ঐতিহাসিক সাফল্য আছে। যার মধ্যে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে ‘বাংলাওয়াশ’ আর ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারানোর রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। ওই তিন সিরিজেই ব্যাট ও বলে টাইগারদের দুর্দাণ্ড প্রতাপে মাঠ কেঁপেছে। প্রতিপক্ষ দলের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।
তারপরও ২৫ মার্চ ডাম্বুলার রণগিরি স্টেডিয়ামে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং ও ক্যাচিংয়ে অনন্য মাশরাফি বাহিনীকে দেখে অনেকের মতো যারপরনাই সস্তুষ্ট হাথুরুসিংহেও। তাইতো মুখে এমন প্রশংসা, ‘আমার মনে হয় প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ খেলেছে দল। আমার কোচিংয়ে কয়েকটি বেশ ভালো টিম পারফরম্যান্স আছে। তবে এ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বোধ হয় তার অন্যতম সেরা টিম পারফরম্যান্স।’
Advertisement
তবে কোচ বেশি খুশি ব্যাটসম্যানদের ওপর। কেন খুশি তাও জানা হলো। এতকাল তিনি চাইতেন ৫০ ওভারের ম্যাচের পুরো সময় আর ২০ ওভারের ফরম্যাটের শেষ বল পর্যন্ত যেন এক থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত অন্তত একজন ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকেন।
তাহলে শেষ দিকে যারা উইকেটে আসেন ব্যাট করতে, তারা বাড়তি সাহস পান। ব্যাট চালানোও তুলনামূলক সহজ হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডাম্বুলার রণগিরি স্টেডিয়ামে অনেকদিন পর সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে কোচের। সে ম্যাচে সাত নম্বরে উইকেটে আসা মোসাদ্দেক শেষ বল পর্যন্ত উইকেটে ছিলেন। আর তাইতে শেষ ১৩ বলে রান উঠেছে ৩৫।
বাংলাদেশ কোচ মনেপ্রাণে চান আগে কিংবা পরে যখনই ব্যাটিং করা হোক না কেন, আগামী শনিবারের ম্যাচেও যেন শেষ বল পর্যন্ত বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যানের একজন ৫০ ওভার পর্যন্ত উইকেটে থাকেন। তাই মুখে এ কথা, ‘আমার দেখা ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে ২৫ মার্চের ব্যাটিংটা অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। আমি সব সময় চাই ৫০ ওভারের ম্যাচ ও ২০ ওভারের ফরম্যাটের শেষ বল অবধি আমার দলের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের অন্তত একজন উইকেটে থাকতে পারে।
প্রথম ম্যাচে সেটাই হয়েছে। আমার গেম প্ল্যান সফল হয়েছে। সে আলোকে বলতে গেলে বলতে হয়, ওটাই ছিল আমাদের যথার্থ ব্যাটিং।’
এআরবি/এনইউ/জেআইএম