আসছে বাজেটে (২০১৭-১৮) সরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি পাঁচগুণ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, যেসব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ও টিউশন ফি ১২ থেকে ২০ টাকার মধ্যে সেগুলো বাড়িয়ে আগামী বাজেটে পাঁচগুণ করা হবে। বেতন ও টিউশন ফিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, দুই বছর পর দেশে বিড়ির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ৪১৫ লাখ কোটি টাকা।
Advertisement
আলোচনা সভায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তারা বাজেট বিষয়ে বিভিন্ন দাবি ও পরামর্শ তুলে ধরেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে (এসডিজি) সামনে রেখে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানান তারা। এজন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, পরিবেশ, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ইত্যাদি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। সভায় ৩৭টি এনজিওর প্রধান কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নেন।অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ এসিডিজি অর্জনে সক্ষম হবে। তবে এক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। এজন্য জেলা পরিষদগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বেতন ও টিউশন ফি ১২ থেকে ১৬ টাকা। হোস্টেল ফিও অনেক কম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেতন ও আবাসিক হলের চার্জও দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম। অথচ একই সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন টিউশন ফি অনেক বেশি। তাই যৌক্তিকভাবে এগুলো বাড়ানো উচিত।তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে আইসিইউর নামে যে বাণিজ্য চলছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউর ভাড়া ফাইভ স্টার হোটেলের চেয়েও বেশি। দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন হেলথ সেন্টারে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অতিরিক্ত এক বছর সেবাদান বাধ্যতামূলক করা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর কর কমানো উচিত।গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশে কে চৌধুরী বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ অথবা মোট জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা এখন সময়ের দাবি। এজন্য সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর বাস্তবায়নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে শিক্ষাখাতে ক্রমান্বয়ে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ অর্থবরাদ্দের জন্য দিক নির্দেশনা দিতে হবে।মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শাহীন আনাম বলেন, সরকার ইতোমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি চালু করেছে। প্রতিবন্ধী, দলিত, হিজড়া, বেদেসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু নাসের খান বলেন, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতর প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অথচ তাদের কাজ হওয়া উচিত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব পড়বে তা মূল্যায়ন করা।
এমএ/আরএস/আরআইপি
Advertisement