বিশেষ প্রতিবেদন

পুনঃতদন্তে আটকা মঞ্জুর হত্যা মামলা

৩৬ বছর আগে মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এখনও শেষ হয়নি আলোচিত মামলাটির বিচারকার্য। মামলাটির রায়ের পর্যায় থেকে এখন চলছে পুনঃতদন্ত। গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হলেও আড়াই বছরেও মামলাটির পুনঃতদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

Advertisement

মামলার প্রধান আসামি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আইনজীবী দাবি করছেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আসামি করা হয়েছে। তিনি এ মামলায় সম্পূর্ণ নির্দোষ।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, মেজর মঞ্জুর হত্যা মামলার তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে করা হচ্ছে। মামলাটির তদন্ত শেষ হলে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আসাদুজ্জামান খান রচি বলেন, মামলাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাকি থাকায় পুনরায় আবেদন করলে আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত সংস্থার উচিত মামলাটির চার্জশিট খুব দ্রুত দেয়া।

Advertisement

মামলার অন্যতম আসামি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই আইন আইনের গতিতে চলুক। এ মামলায় এরশাদ সম্পূর্ণ নির্দোষ। মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। তাকে রাজনৈতিক হয়রানির জন্য আসামি করা হয়েছে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) ছিলেন আবুল মঞ্জুর। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে মঞ্জুরকে আটক করে পুলিশ। ওই বছরের ২ জুন মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং মৃত্যুর সনদপত্র পেতে দেরি হওয়ায় ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

দীর্ঘ ১৯ বছর মামলাটি বিভিন্ন কারণে ঝুলেছিল। বিচার চলাকালে পর্যায়ক্রমে ২২ বিচারক বিচারিক কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। ২২ বিচারকই বিভিন্ন কারণে বদলি হন।

Advertisement

২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার ২৩তম বিচারক ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আসাদুজ্জামান খান রচি মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। তিনি আবেদনের পক্ষে শুনানিতে বলেন, এ মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরও অনেককে সাক্ষী করা যায়নি। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য মামলাটি অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

মামলার প্রধান আসামি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শমসের।

জেএ/এমএমএ/এমএআর/পিআর