একসময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৫ সালের ২৯ মার্চ রাত ১২টা ১০ মিনিটে সবাইকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন মধু কণ্ঠের এই গায়ক।
Advertisement
গুণী এই সঙ্গীত শিল্পীকে ঘিরে কোনো আয়োজনই চোখে পড়ে না চলচ্চিত্র, সঙ্গীতাঙ্গন ও গণমাধ্যমে। এটা গুণীর কদরের অবমাননার মতোই বলে মনে করেন মিলুর সমসাময়িক অনেক শিল্পী। তাদের দাবি, ‘আজকে মিলুর মতো শিল্পীকে ভুলে যাওয়ার মিছিল দেখে ভয় হয়, একদিন আমাদেরও কেউ মনে রাখবে না!’
তবে নিজের পরিবারের কাছে ঠিকই স্মরণ-শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন খালিদ হাসান মিলু। খালিদ হাসান মিলুর দুই পুত্র প্রতীক হাসান ও প্রীতম হাসান। তারাও বেশ আলোচিত সঙ্গীতশিল্পী। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই গান করে যাচ্ছেন। মৃত্যুবার্ষিকীতে বাবাকে স্মরণ করলেন ছোট ছেলে প্রীতম। বাবার গাওয়া নিজের প্রিয় গান (যে ব্যথা দিয়েছ) ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তিনি। বাবাকে নিয়ে লিখেছেন স্মৃতিকথাও।
প্রীতম লিখেছেন, ‘বাবার সঙ্গে আমার স্মৃতি নিয়ে খুব একটা কথা বলি না আমি। কারণ শেষ যেটা মনে আছে সে স্মৃতির ভার অনেক বেশি। ১২ বছর আগে আব্বু এই রাতে মনোয়ারা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে শেষ লড়াই করছিলেন। আম্মু, ভাইয়া (মিলুর বড় সন্তান প্রতীক হাসান) আমাকে ঠিক এই সময় মামাতো বোনের বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেন। কারণ আব্বুর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। আমি বাসায় আসার পরে ঠিক রাত সাড়ে ১২টার ল্যান্ডফোনে আম্মু আমাকে বলেন যে, আব্বু চলে গেছেন। আমি কাঁদি নাই। পরের দিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে আব্বুর জানাজা পড়ে আমি প্রীতম আহমেদ ভাইয়ার গাড়িতে করে বাবাকে দাফন করতে দিয়ে আসি। তখনো কাঁদি নাই।’
Advertisement
আবেগভরা স্ট্যাটাসে প্রীতম আরও লেখেন, ‘বাবাকে কবরে শোয়ানোর পরে একজন ইমামের বলা অনুরূপ একটা আয়াত পরতে পরতে তার লাশে প্রথম এক টুকরো মাটি ছুড়ে ফেলার সময় দম বন্ধ করার মতো এক কান্না আসে। এক দু ফোটা চোখের পানি, তারপর বাসায় ফেরত চলে আসা। এই ছিল শেষ স্মৃতি বাবার সাথে।’
খালিদ হাসান মিলুকে বলা হয় স্বর্ণকণ্ঠ গায়ক। তার সঙ্গীত জীবন শুরু হয় আশির দশকের প্রথম দিকে। তার প্রথম অ্যালবাম ‘ওগো প্রিয় বান্ধবী’। প্রথম অ্যালবাম দিয়েই বাজিমাত করে দিয়েছিলেন তিনি। তার প্রকাশিত অন্যান্য অ্যালবামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রতিশোধ নিও’, ‘নীলা’, ‘শেষ ভালোবাসা’, ‘আয়না’ ইত্যাদি।
১৯৮২ সাল থেকে খাদিল হাসান মিলু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেয়া শুরু করেন এবং প্রায় ২৫০টি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন তিনি। সেসব গানের বেশিরভাগই ছিল তুমুল শ্রোতাপ্রিয়। তার মধ্যে আজও মুখে মুখে বাজে ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ ছবির ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’ ছবির ‘জীবন ফুরিয়ে যাবে’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’ ছবির ‘অনেক সাধনার পরে’ ইত্যাদি গান।
তাদের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আরও উল্লেখ করা যায়- ‘সেই মেয়েটি’ ‘কতদিন দেখিনা মায়ের মুখ’, ‘নিশিতে যাইও ফুলবনে’, ‘নীলা তুমি আবার এসো ফিরে’, ‘ও ও রুবি’ ইত্যাদি।
Advertisement
তিনি ১৯৯৪ সালে হৃদয় থেকে হৃদয় চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন।এনই/এলএ