তিনি তার মতোই থাকেন। আলোচনার স্রোতেও গা ভাসান না, সমালোচনায়ও ক্ষুব্ধ হন না। বলছি গায়ক, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক অনুপম রায়ের কথা। আজ এই গায়কের জন্মদিন। এবার তিনি ৩৫ বছরে পা রাখলেন।
Advertisement
শৈশব থেকেই গানের সঙ্গে ছিল সখ্যতা। গায়ক হওয়ার বাসনাও ছিল মনে মনে। তবে পেশাজীবন শুরু করেছিলেন একজন প্রকৌশলী হিসেবেই। ইচ্ছা আর ধৈর্যের হাত ধরে ২০১০ সালে তার উত্থান। নন্দিত পরিচালক সৃজিত মুখার্জির ‘অটোগ্রাফ’ চলচ্চিত্রে ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ ও ‘বেঁচে থাকার গান’র মাধ্যমে কলকাতার গানের জগতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন।
আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই সৃজনশীল শিল্পীকে। ২০১৫ সালে ‘পিকু’ ছবির সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে বলিউডে পদার্পণ করেন এবং ছবিটির আবহ সঙ্গীতের জন্য ‘ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড’ও পান তিনি। কাজ করেছেন শাহরুখ খান অভিনীত ‘ফ্যান’ ছবিতেও।
অনুপম রায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮২ সালের ২৯ মার্চ। তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষার ১০ বছর পার করেন কলকাতার সেন্ট. পালস ব্রডিং অ্যান্ড ডে স্কুলে। কলেজ জীবন পার করেছেন বেহালার এমপি বিরলা ফাউন্ডেশন থেকে। অনুপম রায় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনেকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। কলকাতায় ২০০৪ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত এনালগ সার্কিট ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন।
Advertisement
‘অটোগ্রাফ’ ছবি দিয়ে শুরু হলেও ‘চলো পাল্টাই’ ছবির ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’ গানটি তাকে তুমুল জনপ্রিয় করে তোলে। এরপর তিনি ‘বাইশে শ্রাবণ’ চলচ্চিত্রের গান পরিচালনা করেন। এই চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটি গান সুপারহিট হয়। বিশেষ করে রূপঙ্কর বাগচি ও শ্রেয়া ঘোষালের গাওয়া ‘গভীরে যাও’ বছরের সেরা গান নির্বাচিত হয়। তবে জুড়িদের ভোটে সেরা গান নির্বাচিত হয় অনুপমের নিজের গাওয়া ‘একবার বল’। তাছাড়া রূপম ইসলামের এই শ্রাবণ ও সপ্তর্ষী মুখোপাধ্যায়ের ‘যে কটা দিন’ দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
‘চতুষ্কোণ’ ছবিতে ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি দিয়ে তিনি বাজিমাত করে দেন। এই গানটি বসন্তের গান হিসেবে দুই বাংলাতেই জনপ্রিয়। এছাড়াও অনুপম ‘জানি দেখা হবে’, ‘বেডরুম’, ‘ল্যাপটপ’, ‘চোরাবালি (বাংলাদেশ)’, ‘শুন্য অঙ্ক’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘ওয়ান লাইনার’, ‘মিশর রহস্য’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
এখন পর্যন্ত তার তিনটি একক অ্যালবাম বেরিয়েছে। প্রথমটি ‘দূরবীনে চোখ রাখবো না’, দ্বিতীয়টি ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ এবং তৃতীয়টি ‘বাক্যবাগীশ’। তার প্রতিটি অ্যালবামই দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে দুই বাংলার শ্রোতাদের কাছে।
ব্যক্তিজীবনে ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর বিয়ে করেন অনুপম রায়। স্ত্রীর নাম পিয়া চক্রবর্তী। তিনি ভারতের উত্তর-প্রদেশে অবস্থিত শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএচইডি করছেন।
Advertisement
দিন দিন নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন জনপ্রিয় গায়ক, গীতিকবি ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। সবকিছু ছাপিয়ে তার গানগুলো অনুপমের গান বলেই পরিচিত; এটাই শিল্পী হিসেবে তার সার্থকতা বলা চলে। কলকাতার পাশাপাশি বাংলাদেশেও তার গানের ভক্ত রয়েছে প্রচুর। বেশ কয়েকবার তিনি এসেছেন এখানে কনসার্ট আর নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অনুপমের ব্যান্ড’র কনসার্ট সে এক উপভোগের বিষয়।এলএ