বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) অ্যাসেম্বলি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এ অ্যাসেম্বলির উদ্বোধন করবেন। চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জা ছাড়াও বাংলার চিরায়ত রূপ তুলে ধরা হবে উদ্বোধনী পর্বে। আয়োজনটি সফলভাবে শেষ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে কাজ করছে।
Advertisement
জানা গেছে, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চ হবে নৌকার ওপর। মঞ্চের দিকে তাকালে মনে হবে পুরো সংসদ ভবনই নৌকার ওপর ভাসমান। আর সিঁড়িগুলো ঢেউয়ের মতো। এছাড়া বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। থাকবে চোখ ধাঁধানো লেজার শো। দেখানো হবে বৈশাখী মেলাও। মেলার অনুষঙ্গ হিসেবে থাকবে পাপেট শো ও নাগরদোলা। এছাড়া অনুষ্ঠানে গাইবেন দেশের বিখ্যাত শিল্পীরা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ সংসদীয় সংস্থার সমাবেশ সফল করতে ৮ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
বিশ্বের ১৩১ দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদ সদস্যসহ প্রায় ১৫ শতাধিক প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দেশের ইতিহাসে এ ধরনের সমাবেশ এটাই প্রথম। এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে একটি উদার, গণতান্ত্রিক ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কিউবা এবং সুইডেনের স্পিকার সাধারণত আইপিইউ সম্মেলনে অংশ নেন না। কিন্তু এবার বাংলাদেশের সম্মেলনে তারা নিজ দেশের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৫টি দেশের সংসদের ১২০০ সদস্য সম্মেলনে যোগদান করবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতিনিধিদের মধ্যে ৮০টি দেশের সংসদের স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সরেজমিনে দেখা গেছে, মহা আয়োজনের চলছে প্রস্তুতি। পুলিশ বাহিনী ছাড়াও আনসার সদস্যরা রয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেম নিখুঁত করতে প্রায় দুইশ লোক কাজ করছে। আর মঞ্চে চলছে মহড়া। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল থেকে ছোট ছেলেমেয়েরা এ মহড়া দিচ্ছে।
মিরপুরের হলি ক্রিসেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাকিব, আদাবরের ডিসেন্ট গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র শুভ এসেছে গ্রাম বাংলার ছেলেমেয়েরা কীভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যবই পেয়ে পড়ালেখা করছে তা তুলে ধরতে। বিকেল ৩টা থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তারা মহড়ার জন্য। কারণ সেই সময় একদল যুবক নৌকার গুন টানার মহড়ায় অংশ নিচ্ছিল।
এছাড়া রাজধানীর বাড্ডা থেকে কবির, সামছুল, আরেফিন এবং কল্যাণপুর থেকে নবীতা, বিমল, রাজুসহ একদল শিক্ষার্থী অপেক্ষায় রয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তুলতে। জানতে চাইলে নবীতা সোজাসাপটা উত্তর দেয়, তারা ‘২৫ মার্চের লাশ হবে।’
Advertisement
জানা যায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হবে। এর অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তুলে ধরা হবে। দর্শক হিসেবে রাখা হবে অনেক অভিনেতাকে। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে প্রতিক্রিয়া দেবেন।
ফার্মগেটের বাসিন্দা আলী আকবর তাদের একজন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তার উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। আকবর জানতে চান, তাদের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হবে কিনা। এছাড়া এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পারায় খুব গর্বিত বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউয়ের যৌথ উদ্যোগে আগামী ১ থেকে ৫ এপ্রিল ঢাকায় ১৩৬তম এ অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজক দেশের স্পিকার হিসেবে অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট হবেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এ বিষয়ে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুনভাবে উপস্থাপন করবে এ অ্যাসেম্বলি। এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে একটি উদার, গণতান্ত্রিক ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।
এইচএস/আরএস/ওআর/আরআইপি