প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলামের হাত ধরে চলচ্চিত্রে এসেছিলেন সদ্য প্রয়াত চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা মিজু আহমেদ। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মিজু আহমেদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এফডিসি চত্বরে। জানাজার পর পরিচালক সমিতির অফিসে বসে জাগো নিউজের সঙ্গে মিজু আহমেদ প্রসঙ্গে কথা বলেন এই নির্মাতা।
Advertisement
শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭৭ সালে মিজুর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তখন আমার বাসা ছিল হাতিরপুলে। আমার বাসার পাশে একটি মেসে সে থাকত। মিজু থিয়েটার করত। সেখানকার এক লোকের মাধ্যমে জানতে পারে আমি চলচ্চিত্র নির্মাতা। একদিন সে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আমাকে মিজু বলে, সে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চায়। তখন আমি তাকে দেখে কিছুটা অবাক হই। জানতে পারি সে রাজনীতি করত। কিছু উগ্র মেজাজের ছিল।’
তিনি বলেন, ‘তখন আমি মিজুকে আমার বাসা থেকে কিছু জীবনানন্দ দাশ, রবীন্দ্রনাথের কবিতার বই দিয়ে বলি, এগুলো পড়ো। তোমার আঞ্চলিক ভাষার টান কেটে যাবে এবং বেশি বেশি দেশের গান শুনবা। মেজাজও ঠাণ্ডা থাকবে। এরপর আমার সঙ্গে আবার দেখা করো। এর কিছুদিন পর মিজু আমার সঙ্গে দেখা করে। তখন আমি আমার নতুন ছবি ‘নদের চাঁদ’র জন্য শিল্পী খুঁজছিলাম। এরপর তার আচারণে পরিবর্তন দেখে আমি মুগ্ধ হই। পরে তাকে আমার ওই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেই।’
শেখ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সেখান থেকেই আমার হাত দিয়ে মিজু আহমেদ চলচ্চিত্রে কাজ করতে শুরু করে। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে অনার্স-মাস্টার্স করা ছেলে ছিল। শিক্ষিত ছেলে হওয়ায় সহজেই যেভাবে তার কাছে কাজ চাইতাম সে ধরতে পারত। আস্তে আস্তে মিজু চলচ্চিত্রে পরিচিতি পেতে থাকে। এরপর সে আমার নির্দেশনায় ৪০টির মতো চলচ্চিত্রে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে।’
Advertisement
ভিলেন হিসেবে মিজু আহমেদকে পছন্দ করলেন কেন? নায়ক বানালেও তো পারতেন! এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্মাতা হিসেবে আমি তার মধ্যে খল অভিনেতাকেই বেশি সাচ্ছ্যন্দবোধ করতে দেখেছি। সে কারণে আমি তাকে ভিলেন বানিয়েছি। আমার ধারণা কিন্তু সত্যি হয়েছে। এখন পর্যন্ত খল অভিনেতা হিসেবে ঢাকাই ছবিতে সফল মিজু আহমেদ। শুধু তাই নয়, সে শিল্পী সমিতির সভাপতি, সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছে একাধিকবার।’
‘মা বড় না বউ বড়’ ছবির এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘মিজু আহমেদ চলে যাওয়ায় চলচ্চিত্রের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা কোনো দিনই পূরণ হবে না। একে তো শিল্পী সংকট তাতে সে হঠাৎ চলে গেল। এই ব্যথা কীভাবে মেনে নেব সেটা বুঝতে পারছি না।’
শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিনয়ের বাইরে মিজু ছিল দারুণ খেলাধুলা ভক্ত। ক্রিকেট খেলা সে ভীষণ পছন্দ করত। দেশ-বিদেশে খেলাধুলার যাবতীয় খবর সে রাখত। আমি শুনেছি সে যৌবনকালে উত্তরবঙ্গে দাপিয়ে ক্রিকেট খেলেছে। এছাড়া সে ছিল তৎকালীন রাবির একজন তুখোড় ছাত্রনেতা। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করবেন এটাই কামনা করি।’ এনই/এলএ
Advertisement