সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ পঞ্চম দিনের মতো অপরেশন টোয়াইলাইট চলছে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা জঙ্গিদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা বিস্ফোরক অপসারণ করছেন।
Advertisement
পাশাপাশি দুই জঙ্গির মরদেহে বেধে রাখা সুইসাইডাল ভেস্ট অপসারণ করে মরদেহ বের করার চেষ্টা করছেন কমান্ডোরা। গুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ না থাকায় এলাকাবাসীর মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে।
মহানগরের স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিববাড়ি এলাকার বাসিন্দা ছয়েফ খান আজ জাগো নিউজকে বলেন, গোলাগুলি বা বিস্ফোরণের শব্দ না থাকায় এবং জঙ্গিদের সকলকে কমান্ডোরা হত্যা করায় স্থানীয়দের মনে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে অভিযান চলাকালে বিদ্যুৎ ও গ্যাস না থাকায় এলাকাবাসী চরম কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে শনিবার রাত ১২টা ১মিনিট থেকে শিববাড়ি এলাকার তিন কিলোমিটার জুড়ে জারি করা ১৪৪ এখনো বলবৎ রয়েছে। ফলে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীসহ কাউকেই অভিযান স্থলের কাছে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর এসব কারণে অপারেশন টোয়াইলাইট বা গোধূলী সম্পর্কে খুব বেশি তথ্যও জানা যাচ্ছে না।
Advertisement
সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানান, সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের অভিযানে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। আতিয়া মহলে আর কোনো জীবিত জঙ্গি নেই। তবে বিস্ফোরক অপসারণে কাজ করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার দুপুরে শিববাড়ি এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আর কোনো গুলি বা বিস্ফোণের শব্দ শোনা যায়নি।
অভিযান স্থলের কিছুটা কাছে গিয়ে দেখা গেছে, আতিয়া মহলের পুরো ভবনটা যে অবস্থায় আছে সেটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের বেশিরভাগ দেয়ালই গুলি ও বিস্ফোরণে ঝাজরা হয়ে গেছে। সেজন্য সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালাচ্ছেন কমান্ডোরা।
দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলের নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও মহানগর পুলিশের একটি দল গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত আড়াইটার দিকে জঙ্গিদের ফ্ল্যাটের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে পুরো ভবনটি ঘিরে রাখে।
Advertisement
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরদিন তারা ওই ভবনের ২৯টি পরিবারের ৭৮ জন বাসিন্দাকে জঙ্গিদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেন।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অভিযান নিয়ে সেনবাহিনীর প্রেসব্রিফিং শেষে দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। আহত হন র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ ৪৬ জন। বর্তমানে পঞ্চম দিনের মতো ওই ভবনে অভিযান গোধূলী চালাচ্ছেন সেনা কমান্ডোরা।
ছামির মাহমুদ/এফএ/পিআর